Cvoice24.com

গার্ডারচাপায় নিহত রুবেলের মরদেহ নিতে মর্গে হাজির ৪ স্ত্রী

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১৬ আগস্ট ২০২২
গার্ডারচাপায় নিহত রুবেলের মরদেহ নিতে মর্গে হাজির ৪ স্ত্রী

রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারচাপায় পাঁচজন নিহতদের একজন আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫)। আজ সকালে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয় মর্গে। আর সেখানেই রুবেলের স্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে এক বিভ্রাট। মর্গের সামনে চার নারী নিজেকে রুবেলের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন। এ পর্যন্ত তার ৭টি বিয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে ছিলো এ চিত্র। 

হাসপাতালে তার মরদেহ দেখতে আসা ৪ নারী নিজেকে রুবেলের স্ত্রী দাবি করেছেন। এছাড়া আরও এক তরুণী নিজেকে রুবেলের অন্য এক স্ত্রীর ঘরের মেয়ে বলে দাবি করেছেন। ওই তরুণীই রুবেলের আরও এক স্ত্রীর নাম দিয়েছেন; যিনি মারা গেছেন।  

নিজেকের রুবেলের মেয়ে দাবি করা তরুণীর নাম নিপা আক্তার। তিনি জানান তার মায়ের নাম নার্গিস আক্তার। নিপা আক্তার বলেন, আমার মায়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরে ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মা পরে অন্য জায়গায় বিয়ে করেন। আমি খবর (মৃত্যুর) পেয়ে আজ আমার বাবাকে শেষ দেখাটা দেখার জন্য মর্গে এসেছি। আমার বাবার প্রথম স্ত্রী টিপু আক্তার সন্তান হওয়ার সময় মারা যান। এখানে খন্দকার বিউটি আক্তার, পুষ্পা বেগম, রেহানা, সাহিদা, সালমা আক্তার পুতুল নামে মোট ৪জন স্ত্রী উপস্থিত আছেন। 

তাদের মধ্যে প্রথম স্ত্রী রেহানার সঙ্গে বিয়ে হয় ৩০ বছর আগে। সেই ঘরের প্রথম ছেলেসন্তান হৃদয় সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরেন।

প্রথম স্ত্রী রেহানার বোনজামাই ও রুবেলের ভায়রাভাই রহমত বলেন, আমরা শরীয়তপুরে থাকি। আমাদের রুবেল বায়িং হাউজের ব্যবসা করতেন বলে জানতাম। আমরা তেমন একটা ঢাকায় আসতাম না। মৃত্যুর খবর শুনে আসলাম। শুনেছিলাম সে দ্বিতীয় আরেকটা বিয়ে করেছেন।

রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শাহেদা। তার ঘরে রত্না নামে ১৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সিংগাইর এলাকায়। ঢাকায় উত্তরা থাকেন।

তবে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহেদা নিজেকে প্রথম স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে ১৯৯৯ সালে বিয়ে হয়েছে। আমিই প্রথম। আমাকে সে কখনো বলেনি তার আরেকজন স্ত্রী আছে। সে আমাদের সাথেই থাকত (মানিকগঞ্জের সিংগাইরে)। একটি বিয়ের দাওয়াত আছে বলে সে চলে আসে। যে গাড়িতে সে গতকাল ছিল সেটা আমার টাকায় কেনা। আমাদের ওখানে নাম দেওয়া আছে নুর ইসলাম, সে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ভোটার। গাড়ির যে টাকা পেমেন্ট করেছিল, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স, সবখানেই নুর ইসলাম লেখা। এখন একজন বলছে তার নাম আইয়ুব আলী, আবার বলছেন রুবেল। নুর ইসলামের বাবার নাম দেওয়া তারা চাঁদ মন্ডল। গাড়ির কাগজেও তার নাম নুর ইসলাম। সে প্রত্যেক ঈদ আমাদের সাথেই করত, আমাদের কাছেই থাকত সে। 

তিনি আরও বলেন, আজ সে এত টাকার মালিক হয়েছে... আমি তাকে ডিপিএস ভেঙে টাকা দিয়েছি। তার সব কিছু আমার টাকায় করা। আমার দুই সন্তান শহিদুল ইসলাম ও রত্না আক্তার। আমরা মরদেহ সিংগাইরে দাফন করতে চেয়েছিলাম। সবার সম্মতিক্রমে প্রথম জানাজা সিংগাইরে আমাদের ওখানে হবে, সেখান থেকে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে মেহেরপুরে দাফন করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা রুবেলের আরেক স্ত্রী সালমা আক্তার পুতুল বলেন, আমার সাথে রুবেলের ২০১৪ সালে বিয়ে হয়। আমি মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে দেখতে মর্গে এসেছি। এসে শুনলাম সে নাকি এখন পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছে। 

সালমা আক্তার পুতুল রুবেলের নামে একটি প্রতারণার মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে কবে, কেন তিনি মামলাটি করেছিলেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। 

পুতুল বলেন, যেহেতু সে মারা গেছে তাই আমার কোনো অভিযোগ নেই। তাদের সিদ্ধান্তে যেখানে দাফন করতে চায়, সেখানে করতে পারে।

খন্দকার বিউটি আক্তার নামে আরেক নারী বলেন, আমিও তার আরেকজন স্ত্রী, তার সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। খবর পেয়ে আমি আজ মর্গে এসেছি। যে মরে গেছে তার দাবি করে আর কী লাভ, সবাই আছে, সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে মেহেরপুরে দাফন করা হবে। 

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডের মোড়ে বিপণিবিতান আড়ংয়ের সামনে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কংক্রিটের বিশাল গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় চলন্ত একটি গাড়ির ওপর পড়ে যায়। গার্ডারটি গাড়ির ওপর এমনভাবে পড়ে যে তার নিচে আসলে কয়জন চাপা পড়েছেন সেটা কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় গাড়িটিতে মোট ৭ জন ছিলেন, এদের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন। বেঁচে যাওয়া দু’জন হলেন নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১)। হৃদয়-রিয়া মনির বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন সবাই।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়