Cvoice24.com

সীতাকুণ্ডে বন্ধুকে কাজ বিক্রি করে বিপাকে মূল ঠিকাদার

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:২২, ২১ মে ২০২২
সীতাকুণ্ডে বন্ধুকে কাজ বিক্রি করে বিপাকে মূল ঠিকাদার

‘যত বিপদ আসুক একজন অন্যজনকে ছেড়ে যাবেনা।’ এরকম মৌখিক অঙ্গীকার করে দুই বন্ধু একটি জঙ্গল পার হচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ একটি বাঘ সামনে চলে আসে। এক বন্ধু দ্রুত একটি উঁচু গাছে উঠে পড়ে। কিন্তু অন্য বন্ধুটি গাছে চড়তে জানে না। তখন নিচ থেকে বন্ধুটি বলল, বিপদের সময় এমন করার তো কথা ছিলনা। গাছের উপরে থাকা বন্ধুটি জবাব দিল, ‘কথা দেয়ার সময়তো বাঘ ছিলনা।’—এভাবে গল্পটি শোনাচ্ছিলেন সাইফকো ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মানিক মাষ্টার। নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে পাওয়া কাজ অংশিদারীত্বের ভিত্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভার অধীনে ‘নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় কলেজ রোডের (মন্দির সড়কের) একাংশের কাজ পায় সাইফকো ট্রেডার্স। এই কাজের বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই সড়কের অন্য একটি অংশের বরাদ্দ পায় আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ। এই অংশের বরাদ্দ ছিল কোটি ৭ লাখ টাকা। সাইফকো ট্রেডার্সের নামে পাওয়া কাজটি তারা আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের কাছে বিক্রি করে দেয়। রোজার মাঝামাঝি সময়ে পৌর প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ সড়কটির কাজ শুরু করে। প্রথম দিকে ঠিকঠাকভাবে কাজ শুরু করলেও ঈদের বন্ধের সুযোগ নিয়ে ২৯ এপ্রিল শুক্রবার দুই গাড়ি দুই নম্বর ইট দিয়ে সড়কের গাথুঁনির কাজ চালাতে থাকে মিস্ত্রিরা। স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে কয়েকজন মিস্ত্রি কাজ করছেন। জানতে চাইলে তিনি দুই নম্বর ইটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ঠিকাদার যা দেয় আমাদের তা দিয়ে কাজ করতে হয়। ঠিকাদার হারুন দুই গাড়ি দুই নম্বর ইট পাঠিয়েছেন।’

অন্যদিকে সাইফকো ট্রেডার্সের মালিক মানিক মাস্টার প্রথমে কাজটি বিক্রি করার কথা স্বীকার করলেও পরবর্তীতে কিছুটা ঘুরিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান সাইফকো ট্রেডার্স, শফি ট্রেডার্স ও আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের সমহারে পুঁজি খাটানোর কথা। কাজ তদারকি করছিলেন আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুন। তিনিই এই কাজে দুই নম্বর ইট ব্যবহার করেছেন। অথচ এখন যখন এটা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তখন তিনি পাশ কাটানোর চেষ্টায় আছেন। পুরো দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে তিনি নিজে এই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’

ঠিকাদার মানিক আরও জানান, নথিপত্রে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার হারুনুর রশীদের স্ত্রী সুমনা আক্তার সুমি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন হারুনুর রশীদ। নির্বাচনের শর্তানুযায়ী কোন ঠিকাদার নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনা। তাই সে সময় হারুনের নামে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সের নিবন্ধন বাতিল করে পৌর কতৃপক্ষ। তখন স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স তৈরি করে পৌরসভায় আবারও নিবন্ধন করান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুনুর রশিদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দিলে ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।

উল্লেখ্য, নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে বরাদ্দকৃত সীতাকুণ্ড পৌরসভার মন্দির সড়কে দুই নম্বর ইট ব্যবহারের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। এর প্রেক্ষিতে গত ১২ মে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে প্রকৌশলী ও কয়েকজন কাউন্সিলর সড়কের কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় পরীক্ষা করে ব্যবহৃত ইট দুই নম্বর প্রমাণ হওয়ায় সব ইটগুলো অপসারণের জন্য লিখিত নির্দেশ দেন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেন তিনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়