Cvoice24.com

ইউরোপ-আমেরিকায় হঠাৎ মাংকিপক্স 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২০ মে ২০২২
ইউরোপ-আমেরিকায় হঠাৎ মাংকিপক্স 

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, স্পেন ও পর্তুগালে বেশ কয়েকজনের শরীরে বিরল রোগ মাংকিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এ প্রাদুর্ভাব নতুন আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণত ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা যায়। সেখান থেকে ভ্রমণের মাধ্যমে ভাইরাসজনিত এ রোগটি আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।-খবর রয়টার্স ও বিবিসির

গুটিবসন্তের মতোই মাংকিপক্স। রোগটি চিকেনপক্স মনে করেও বিভ্রান্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। মানকিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে আছে—জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, পিঠব্যথা, নাসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও অবসাদ। আবার ঝাঁকুনি দিয়ে ফুসকুড়ি ওঠার ঘটনাও ঘটে।

যদিও মানকিপক্সের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে অধিকাংশ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। এখন পর্যন্ত রোগটির দুটি প্রধান ধরন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে কঙ্গো ধরন অনেক বেশি মারাত্মক। এতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার ১০ শতাংশ। আর পশ্চিমা আফ্রিকা ধরনে মৃত্যুহার এক শতাংশের কাছাকাছি।

যুক্তরাজ্যে পশ্চিম আফ্রিকা ধরন শনাক্ত হয়নি। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক জিমি হোয়াইটওয়ার্থ বলেন—ঐতিহাসিকভাবে, এখন পর্যন্ত খুবই কম রোগী আক্রান্ত হওয়ার পর এখানে (ব্রিটেন) এসেছেন। চলতি বছরের আগে মাত্র আটটি এমন ঘটনা আছে। যা আসলে অতি অস্বাভাবিক ঘটনা।

পর্তুগালে এ-যাবত পাঁচ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। স্পেনে সম্ভাব্য ২৩টি আক্রান্তের ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। তাদের নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেশদুটিতে আগে সংক্রামক ভাইরাসটির প্রকোপ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে একজন মাংকিপক্স রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে।

কানাডায়ও তেরো জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ-ঘটনায় তদন্ত করছেন। মানুষ কিংবা প্রাণি—যে কারও সংস্পর্শে ভাইরাসটি মানবদেহে বাসা বাঁধতে পারে। ১৯৫৮ সালে প্রথম মাংকিপক্স ভাইরাসটি আবিষ্কার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাংকিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। রোডেন্ট জাতীয় প্রাণি ভাইরাসটির বড় আশ্রয়দাতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে যেভাবে ভাইরাসটিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে। ১৮ মে পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকজন রোগী মাংকিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ তাদের পরস্পরের মধ্যে পরিচয় থেকে শুরু করে কোনো সম্পর্ক ছিল না।

তবে ৬ মে শনাক্ত হওয়া প্রথম রোগীটি সম্প্রতি নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। সংক্রমণ যথাযথ শনাক্ত ও প্রকাশ্যে না-আসলে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সম্প্রতি যারা মাংকিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা স্বঘোষিত সমকামী ও উভকামী। ভাইরাসটির সঙ্গে অন্য কিছুর সম্পর্ক আছে কিনা; তা বের করতে বর্তমানে জিনোম সিকোয়েন্সিং করছেন বিজ্ঞানীরা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আরোপ করা বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। এতে মানুষের ভ্রমণও বাড়ছে। যে কারণে এ সময়ে এসে মাংকিপক্সের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এমন একটি শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইউসিএলএ’র মহামারিবিদ্যার অধ্যাপক অ্যান্নে রিমোইন বলেন, ১৯৮০ সালে গুটিবসন্ত নির্মূল করা হয়েছে। এরপর থেকে রোগটির টিকা ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু গুটিবসন্তের টিকা দিয়ে মাংকিপক্স থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু গুটিবসন্তের টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মাংকিপক্সের সংক্রমণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি রোগটি কেন ছড়িয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। ভাইরাসটিতে পরিবর্তন কিংবা রূপান্তর ঘটতে পারে। এমন কিছু ঘটলে তাও নির্ধারণ করতে হবে। তবে লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়