চবিতে এমরানের বাবা ছিলেন ড. ইউনূসের প্রতিবেশী, একসাথে দিতেন আড্ডাও
চবি প্রতিনিধি
ড. ইউনূস ইস্যুতে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের বিবৃতিতে সই করতে অস্বীকার করে বরখাস্তকৃত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তার বাবা সুলতান আহম্মদ ভুঁইয়াও ছিলেন চবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক। ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেসময়ের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুলতান আহম্মদ ও ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠজন। তারা পাশাপাশি কোয়ার্টারে থাকতেন। একসঙ্গে আড্ডায় বসতেন।
জানা গেছে, এমরান আহম্মদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তার বাবা সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়া ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। সেই সুবাদে এমরান বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতা করেছেন ড. ইউনূসও। এ কারণেই কি ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান এমরানের?
এ বিষয়ে জানতে এমরানের পিতা সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়ার সহকর্মী ও বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. আবুল কাসেম সিভয়েসকে বলেন, আমি সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়াকে প্রথমে আমার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। পরবর্তীতে বিভাগের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে কিছুদিন কলিগ হিসেবে পেয়েছি। তবে তখন তিনি অবসরে চলে গিয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষকের মতো আমার সাথে সম্পর্ক ছিল। ওনার ব্যক্তিগত বিষয় আমার জানা নেই। তবে সুলতান আহম্মদ স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে ড. ইউনূস সাহেব ও সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়ার মধ্যে পারিবারিক কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে শুনেছি ওনারা ক্যাম্পাসে পাশাপাশি থাকতেন। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
বাংলা বিভাগের আরেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. শাহজাহান মুনীর বলেন, ড. ইউনূস আমার সরাসরি শিক্ষক। সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়াকে আমি সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের পিতা সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়ার আরও দুইজন সহকর্মী শিক্ষক সিভয়েসকে জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের সাথে সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুইজনে একসাথে শিক্ষকতা করেছে। ছিলেন ক্যাম্পাসে। শিক্ষক কোয়ার্টারে থাকতেন তারা। পাশাপাশি ছিল বাসা। প্রতিবেশী ছিলেন ওনারা। দুইজনের বাসায় আসা যাওয়া হতো। একসাথে আড্ডাও দিতেন তারা। সেই সুবাদে পিতার কলিগ হিসেবে ড. ইউনূসের প্রতি আলাদা ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক এমরানের। তবে আলাদা ভালোবাসা নাকি আমেরিকা পাড়ি জমাতে মোড় নিল এসব বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।
জানা যায়, অ্যাটর্নি জেনারেলের এমরান ১৯৯২-৯৩ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী, যারা বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত, তারা জানিয়েছেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এমরান ছাত্রলীগ করতেন। আইন পড়া শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতি পান এবং ২০০৫ সালের ২১ জুলাই সদস্যপদ লাভ করেন। এর পর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি একজন মন্ত্রীর সুপারিশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ড. ইউনূস ইস্যুতে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের বিবৃতিতে সই করতে অস্বীকার করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। এরপর বরখাস্ত হন তিনি।