Cvoice24.com

চমেকের এমআরআই মেশিন/
৫ বছরে দুবার নষ্ট, একবছর ধরে অচল  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৪ আগস্ট ২০২২
৫ বছরে দুবার নষ্ট, একবছর ধরে অচল  

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য কেনা হয় এমআরআই (ম্যাগনেটিং রিজোনেন্স ইমেজিং) মেশিন। পাঁচ বছরে মেশিনটি নষ্ট হয়েছে দুবার। প্রথম দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটি সারিয়ে নিলেও এরপর থেকে মেশিনটি অকেজো পড়ে আছে। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হচ্ছে পরীক্ষা। এতে করে যেমন গরীব-অসচ্ছল রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে ঠিক তেমনি দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে দ্বিগুন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর দাবি— মেশিনটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় চালু করতে নতুন আরও তিনটি যন্ত্রাংশ সংযোজন করা প্রয়োজন। আর এ মেরামতের পিছনে খরচ হবে প্রায় ৯৪ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের দিকে তাকিয়ে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিনটি মেরামত করা হবে।

চমেক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ কোটি টাকায় ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট এ এমআরআই মেশিনটি কেনা হয়। ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড ‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’মডেলের জাপানি এই মেশিনটি সরবরাহ করে। মেশিনটি চালু করা হয় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর। মেশিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড (মেয়াদ) শেষ হয় ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট। তার আড়াই মাসের মাথায় ওই বছরের ২৮ অক্টোবর অচল হয়ে পড়ে মেশিনটি। সেসময় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেশিনটি পুনরায় চালু করলেও কয়েকমাস যেতে না যেতে আবারও ২০২১ সালের ১১ মে থেকে আবার মেশিনটির যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দেয়। এরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) টেকনিক্যাল ইউনিটকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিমিইউ কর্তৃপক্ষ সেই চিঠির উত্তর দেয় ২১ সালের ২৮ জুন। চিঠিতে তারা জানায়, মেশিনের কমপ্লেকেন্সি মেইনটেন্স কেয়ার (সিএমসি) করার জন্য। 
পরবর্তীতে, ২১ সালের ২ আগস্ট সিএমসি’র আওতায় আসার জন্য এমআরআই মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরপর দুইবার চিঠি দেওয়ার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারিতে মেশিনের জন্য নতুন দুটি যন্ত্রাংশের সংযোজন প্রয়োজন বলে চিঠির উত্তর দেয় মেডিটেল। নতুন এ দুটি যন্ত্রাংশের মূল্য ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৪০ লাখ টাকার আরও একটি যন্ত্রাংশ সংযোজন করার প্রয়োজন বলেও চিঠি দেয় মেডিটেল মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এসব নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজনের জন্য নিমিইউ চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। নতুন যন্ত্রাংশ কেনা ও সংযোজনের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের দিকে তাকিয়ে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন পেলেই চালু হতে পারে এমআরআই মেশিনটি।

 

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০৬ সালে চালু করা হয় এমআরআই মেশিনের। ২০১৪ সালের শেষদিকে সেই মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। সেই মেশিন নষ্ট হওয়ার পর টানা তিন বছর বন্ধ ছিল এমআরআই পরীক্ষা। এরপরই ২০১৭ সালে নতুন মেশিন কেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেনার তিন বছরের মাথায় বিকল হয়ে যায় মেশিনটি। আর এমআরআই মেশিন বিকল থাকার সুযোগে বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। 

জানা গেছে, নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারি এবং নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের জন্য এমআরআই পরীক্ষা দরকার হয়। এমআরআই পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। যেখানে একই ধরনের পরীক্ষা বাইরে করাতে লাগে সর্বনিম্ন সাড়ে ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ এ মেশিনটি বিকল থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। 

চমেক হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ব্যয়বহুল ও দামী মেশিনারিজ সরঞ্জাম মেরামতের জন্য নির্ভর থাকতে হয় বেসরকারি সার্ভিস সেন্টারের জন্য। তাদের দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ রোগী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, ‘একটা প্রসিডিউর মেইনটেইন করতে হয় আমাদের। যে কারণে অনেক সময় লেগে যায়। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আছে যে উচ্চক্ষমতার এই ধরনের মেশিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগেই সিএমসি বা মেইনটেইন্সের আওতায় আনা। আর এটার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়, টেকনিক্যাল ইউনিট, নিমিইউ ও মেডিটেলকে চিঠি দিয়েছি। এমআরআই মেশিনে নতুন আরও পার্টস সংযোজন করতে হবে। যার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকেও চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এটা এখন এ অবস্থায় আছে। অনুমতি পেলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়