Cvoice24.com

চবিতে ফের কর্মচারী নিয়োগে ফোনালাপ ফাঁস: এবার ৮ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৬ আগস্ট ২০২২
চবিতে ফের কর্মচারী নিয়োগে ফোনালাপ ফাঁস: এবার ৮ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের আরও দুইটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এবার তিন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে রেজিস্ট্রার অফিসের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে। টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রার্থীকে হুমকিও দেয় মানিক। টাকা লেনদেনের ব্যাংক রিসিভ কপি ও দুটি ফোনালাপ সিভয়েসের কাছে সংরক্ষিত আছে।

জানা যায়, ২০২১ সালে ৩১ মে ও পহেলা জুন দুইটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে নিম্নমান সহকারী ও অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাদারীপুরের রাকিব ফরাজী সোহেল খান ও মাকসুদুল সালেহীনের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় মানিক।

টাকা লেনদেনের স্লিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে ৫ জুন ৫০ হাজার টাকা, ১১ জুলাই ৩৫ হাজার টাকা, ১৫ জুন ৫০ হাজার টাকা ও ৩ মে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয় প্রার্থীদের কাছ থেকে। মানিকের ডাজ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট ৭০৮১ এর মাধ্যমে এই টাকাগুলো নেয়া হয়। তবে চাকরি না পেয়ে প্রতারণার অভিযোগে ও টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৫ জুলাই মানিককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় এক প্রার্থী।

ফোনালাপ ফাঁসের কথোপকথন:

মানিক চন্দ্র দাস: তুমি আমারে চিনো? একদম খাইয়া ফেলবো, একদম পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো তোরে।

প্রার্থী: আচ্ছা দেখা যাবে। 

মানিক চন্দ্র দাস: পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো কিন্তু একদম। পার্সোনাল বিহেবিহার ঠিক করতে না পারলে খাইয়া ফেলবো একদম।

প্রার্থী: যত টাকা নিছেন, সব টাকা এই মাসের মধ্যেই দিবেন। 

মানিক চন্দ্র দাস: এই বেটা কিসের টাকারে তোর, তুই জুলাইয়ের আগে এক টাকাও পাবি না। শুন তুই পরীক্ষা দিছোস তোর এপ্লিকেন্ট পরিক্ষা দেক, তখন যদি না হয় তুই ফুল টাকা পেয়ে যাবি একসাথে।

প্রার্থী: না, এই মাসের মধ্যেই দিবেন।

আরেকটি ফোনালাপের কথোপকথন:

প্রার্থী: গেছে ৫০?

মানিক: গেছে। তবে ভেজাল বাজায় দাও তুমি। ওইখানে ১০০ টাকা কেন চার্জ কেটে ফেলছে। চার্জসহ দিবা না। ৫০০ টাকা ঘটকা লাগায়ছো আমার।

প্রার্থী: তাইলে টোটাল কত হইলো।

মানিক: টোটাল বাসায় গিয়ে হিসেব করো। সাত ৭০ এর লগে ৫০। 

প্রার্থী- ৮ লাখ ২০ হাজার।

মানিক: হ্যাঁ। ঠিক আছে।

মাকসুদুল সালেহীন নামে এক প্রার্থী বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানিক আমাদের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি টাকা ফেরত চাইলে মানিক আজকে, কালকে দিবে বলে ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে হুমকিও দেয় সে। পরে আমি টাকা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি মানিকের কাছে।

আরেক প্রার্থী সোহেল খান সিভয়েসকে বলেন, আমার কাছ থেকে মানিক চন্দ্র দাশ সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। চাকরির নাম দিয়ে সে প্রতারণা করেছে। আমিও লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবো শিগগিরই।

অভিযোগের বিষয়ে মানিক চন্দ্র দাশ সিভয়েসকে বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমাকে ফাঁসানোর এজন্য এটা করছে তারা। আমি আইনি পদক্ষেপ নিব।’ আরও বিস্তারিত জানাতে আগামীকাল এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে চান মানিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান সিভয়েসকে বলেন, ‘এদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো।’

এর আগে, গত ৩ মার্চ ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হয়।  এ ঘটনায় গত বছর ৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরে মার্চে সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বাতিল ও জড়িতদের শনাক্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে গত ৭ জুলাই অডিও ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় উপাচার্যের সাবেক পিএস খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীনকে পদাবনতি ও কর্মচারী আহমেদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করে সিন্ডিকেট। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত একটি অসাধু চক্র আছে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

-এমআর/পিবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়