Cvoice24.com

শীতের আগেই রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ১০ নভেম্বর ২০২২
শীতের আগেই রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা

গত এক সপ্তাহে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১২ শতাধিক শিশু। স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকায় বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের।

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে দুই বছরের লাবিব। তার পায়ে লাগানো ক্যানলা আর নাকে স্যালাইনের নল। কিছু সময় পর পরই লাবিবের চিৎকারে অস্থির মা পিংকি ছুটেছেন নার্সদের কাছে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে অতিরিক্ত কান্নায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। করুণ চোখে সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় বাবা মোমিন।

শুধু পিংকি কিংবা মোমিন নয়, এমন দৃশ্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডজুড়েই। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। আর এসব মানুষের মধ্যে শিশু রোগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনো বেডে দুই থেকে তিন শিশুও রয়েছে। কিন্তু এখনো শীতের রেশই পড়েনি নগরে। অথচ তার আগেই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী চমেক হাসপাতালে। একই ধরনের চিত্র চট্টগ্রামের অন্যান্য হাসপাতালেও।

চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে শিশু রোগীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। শীত শুরু হওয়ার আগেই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে শিশুর নিউমোনিয়া, পেটের ব্যাথা ও ব্রংকাইটিস রোগ। শিশু ওয়ার্ডের তিনটি সাধারণ ইউনিটে মোট ৬৫টি শয্যা। বিশেষ চারটি ইউনিটসহ সবকটি মিলে শিশু ওয়ার্ডে মোট শয্যাসংখ্যা ১২০টি। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাধীন শিশুরোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৮৮ জন। সাথে আছে রোগীর সঙ্গে আসা এক বা দুইজন স্বজন। রোগী আর স্বজন মিলে রীতিমতো ঘিঞ্জি পরিবেশ। 

এদিকে, গত এক সপ্তাহে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১২ শতাধিক শিশু। স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকায় বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের। 

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়াজনিত কারণে বেড়েছে শিশু রোগের প্রকোপ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অভিভাবকদের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নভেম্বরের শুরু থেকেই হাসপাতালে বাড়তে থাকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত সাতদিনে চমেকের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৮৮২ জন রোগী, যার ৪৫ শতাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকছে অন্তত ৮৪ জন শিশু। আর নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ১শ’র উপরে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুরোগী আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রায় সব হাসপাতালে আগের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালেও গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ হাসপাতালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। তার বিপরীতে রোগী আছে ৪১৬ জন। অতিরিক্ত শিশুরোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে শয্যাই খালি হচ্ছে, সেখানে নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম সিভয়েসকে বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণে শিশু আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত তিনগুণেরও বেশি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের খুবই বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ বেশি রোগী হলে ডাক্তার নার্স সবার উপরেই প্রভাব পড়ে। ক্যাপাসিটি ৮৪ পর্যন্ত নেওয়া যায়, যদি গড়ে চারশ রোগী হয় তাহলে অনেক বেশি। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি যাতে সুস্থ হয়ে রোগীরা বাসায় ফিরে যেতে পারেন।’

অভিভাকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। সামনে শীত আসছে। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে অসুস্থ হলে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান বলেন, ‘শীতের শুরুতে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এখন জ্বর, সর্দি-কাশি, ডেঙ্গু আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় রোগীদের চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি রোগীদের সেবা দিতে।’

চমেক হাসপাতালে সেবা পেতে পদে পদে টাকা!

তবে ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহ করা হলেও সে ওষুধ পাচ্ছেন না তারা। গেটে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত টাকা ছাড়া এক পাও নড়তে চায় না। সাথে দুর্ব্যবহার তো থাকেই। নার্সদের ডাকলেও সঠিক সময়ে তাদের পাওয়া যায় না। 

লাবিবের অভিভাবক মো. মোমিন মোল্লা বলেন, ‘আজকে তিনদিন হলো হাসপাতালে আসছি। নামেই সরকারি হাসপাতাল। নার্সদের ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। ওষুধ নাই বলা হয়, প্রায় সব ওষুধই কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে। আয়া-বুয়াগুলো তো টাকা ছাড়া নড়ে না। আবার নেবুলাইজার দিতে গেলেও এদের টাকা দিতে হয়। বড় ডাক্তারের দেখা খুব কমই পাই।’

এ অভিভাবককে কথা বলতে দেখে আরেক শিশুর অভিভাবক কাছে এসে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘কিসের মেডিসিন? সব বাইরে থেকে কিনতে স্লিপ লিখে দেয়। বেশি টাকা থাকলে সরকারি হাসপাতালে আসতাম না। বাইরেই চিকিৎসা নিতাম। এখন দেখা যায় এখানেও বেসরকারির মতো সব কিনতে হয়। শুধু বেড ভাড়া লাগে না এটাই পার্থক্য। আর এ হাসপাতালের পরিবেশ এতো নোংরা। আয়ার কাজ ওয়ার্ড পরিষ্কার রাখা অথচ আয়াকে টাকা না দিলে সেও কাজ করতে চায় না। তাইলে আমরা গরিবরা যাব কোথায়?’

রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক বলেন, ‘এটা সত্য যে আমাদের হাসপাতাল বেসরকারি হাসপাতালের মতো ঝকঝকে পরিষ্কার না। স্বাভাবিকের চেয়ে যদি তিন থেকে চারগুণ বেশি রোগী সবসময়ই থাকে তবে তো বেগ পেতে হয়। তবে আমাদের স্বল্প জনবল দিয়ে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। আর ওষুধের বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখা হবে যাতে রোগীরা কোনোভাবে প্রতারিত না হয়।’

-সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়