Cvoice24.com

রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব, ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি রাস্তাঘাট 

রামগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:০২, ১৯ নভেম্বর ২০২২
রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব, ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমি রাস্তাঘাট 

রামগড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের থামানোই যাচ্ছে না

খাগড়াছড়ির রামগড়ের বিভিন্ন স্থানে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে বালুখেকোরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নদী-ছড়া, খাল-বিল ও কৃষি জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে তারা। যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু-কার্লভাট ও ফসলি জমি। হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। ড্রেজার মেশিন ও ট্রাক্টরের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সত্যিকারের সক্রিয়তা চান ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, প্রশাসন কর্তৃক ৪টি ইজারাকৃত খালের বাইরে আরও অর্ধশতাধিক অবৈধ ঘাট রয়েছে যেখান থেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিনিয়ত বালু পাচার হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আবার বৈধগুলোও এক জায়গার কথা বলে ইজারার শর্ত ভেঙে অন্যান্য জায়গায় বালু উত্তোলন করছে। 

প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি বালুভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বালুভর্তি ট্রাক প্রায়সময় নষ্ট হয়ে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করে। ভোগান্তিতে পড়েন ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীরা। যে কারণে স্থানীয়রা ওই রাস্তাকে জনভোগান্তির আরেক নাম ‘বালুবাহিত ট্রাক’ বলে অভিহিত করেছেন। তাছাড়া এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ বালুমহাল। যেগুলোতে স্থানীয়রা জড়িত বলে জানা গেছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে রুপাইছড়ি তাঁরাচান পাড়া, লালছড়ি, লামকুপাড়া, বাগানটিলা, সোনাইআগা গেলে এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বালুখেকোরা রাস্তা-ঘাট, ধানিজমি, কালভার্ট ধ্বংস করছে। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। অধিকাংশ বালুমহাল ব্রিজ ও কালভার্ট সংলগ্ন এবং ধানিজমি থেকে শেলো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে অবৈধ বালুব্যবসায়ীরা। 

পাতাছড়া ইউনিয়নের যৌথখামার হয়ে বাজার চৌধুরী ঘাটে ৫টি অবৈধ বালুমহাল দেখা গেছে। এই জায়গাটা বেশ দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারির মধ্যে নেই। এই ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকারদলীয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি।  

সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রামগড় ইউনিয়নের রুপাইছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০হাজার ঘনফুট বালু ও দুটি শেলো মেশিনসহ বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করেছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানস চন্দ্র দাস। 

এর আগে ৩১ আগস্ট পাতাছড়া ইউনিয়নের ধামাইপাড়ার হাসানরাজা ঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বিপুলপরিমাণ বালু ও বালু উত্তোলনের সরঞ্জামাদি জব্দ করেন। এ ঘাটটিতে ইজারাবিহীন বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সদস্য আবদুল লতিফের। তিনি আবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও।  

ওই সময় ইউএনও খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত জানিয়েছেন, ‘অবৈধভাবে খাল থেকে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে অভিযানে উপস্থিত কাউকে না পাওয়া গেলেও উত্তোলিত বালু ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। বালু মহালটির মালিক ইউপি মেম্বার আব্দুল লতিফকে খবর দেয়া হলেও তিনি হাজির হননি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জব্দকৃত বালু ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিলামে বিক্রি করে সরকারি রাজস্ব তহবিলে জমা করা হবে বলেও জানান তিনি।’

তারও আগে ৯ আগস্ট একই অপরাধে রামগড় ইউনিয়নের লামকু পাড়ায় মুজিবুর রহমান সুমন নামে এক ব্যক্তিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

এদিকে, সম্প্রতি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রসঙ্গটি সভায় ওঠে আসলে বক্তারা এ অপতৎপরতা বন্ধের দাবিসহ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে রাস্তা-ঘাট রক্ষায় প্রশাসনকে আরো কঠোর আইন প্রয়োগের অনুরোধ করেন। 
 
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো.শাহ আলম বলেন, মাসিক আইন শৃংখলা সভায় প্রতিবারই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছি। এ ধরণের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা হলে রামগড়ের ভৌগলিক পরিবেশ বদলে যাবে ও মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

ভূমি অফিসের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, উপজেলার তৈচালা ও সোনাইছড়ি খাল এবং পিলাক নদীর অন্তুপাড়া ও বৈদ্যপাড়া এ ৪টি সরকারীভাবে ইজারাকৃত বৈধ বালুমহাল। তবে এসমব মহালেরও সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি এর বাইরের বাকী সবগুলো অবৈধ। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে যৎসামান্য ব্যবস্থা নিলেও কার্যত ফলপ্রসু হচ্ছে না।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, রামগড়ে ইজারাকৃত বালু মহাল ৪টি, অন্যসব মহাল অবৈধ। এসব অবৈধ বালু মহালের সাথে জড়িত ব্যক্তির দায় দল নেবে না। অবৈধ কাজে বিরত থাকতে দলীয়ভাবে সবসময় বলা হয়। তারপরও কেউ বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ সমর্থন বা সহযোগিতা দেবে না। ইজারাবিহীন বালুমহাল বন্ধ করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

রামগড় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সজেকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মানস চন্দ্র দাস বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা নজরে এলে বা অভিযোগ পেলে উপজেলা প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।


 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়