Cvoice24.com

পাহাড়ে বেড়েছে মিষ্টি কুমড়া চাষ, বেশি লাভে খুশি চাষী

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
পাহাড়ে বেড়েছে মিষ্টি কুমড়া চাষ, বেশি লাভে খুশি চাষী

পার্বত্যঞ্চল বান্দরবানে অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিকভাবে পরিচর্যায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড় কিংবা সমতলে জুম চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলজ বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফলে চাষিদের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছর মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হওয়ায় খুবই খুশি বন্দরবানের চাষীরা।

পাহাড়ে উৎপাদিত এসব মিষ্টি কুমড়া নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আর খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাড়ছে এর চাহিদাও। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে বছরজুড়ে জুমের মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। 

পাহাড়ের বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায়ের জীবনধারনের প্রধান উৎস জুম চাষ হলেও বর্তমানে পাহাড়ের ঢালুতে মিশ্র ফলজ বাগানের পাশাপাশি একই জায়গায় মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে। চলতি বছর মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হওয়ায় খুবই খুশি তারা। এতে আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছেন চাষীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালুতে বিভিন্ন জুম পাহাড়ের ফলজ বাগানের সাথে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে জমিয়ে রাখছে। পরে পাইকারে ব্যবসায়ী এসে চাষীদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়াগুলো ক্রয় করে গাড়িযোগে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে ৪১৫৪ মেট্রিকটন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২ মেট্রিকটন। গতবছরের তুলনায় এ বছর চাষ বেড়েছে ৬ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫৮ মেট্টিকটন বৃদ্ধি পেয়েছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী মো. হাফেজ বলেন, ‘পাহাড়ে উৎপাদিত বেশিরভাগ ফল আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ট্রাকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করি। বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ ও সাইজ খুব ভালো, তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদাও ব্যাপক। আমরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়া থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। প্রতিবছর এ সময়টা আমরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিই।’

দেখা যায়, বান্দরবান সদরের টংকাবতী ইউনিয়ন এলাকার রামড়ী পাড়া, বাগান পাড়া, বসন্ত পাড়া, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, এলাকা ছাড়াও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলাগুলোতে ব্যাপক ফলন হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার। এমনকি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বান্দরবানে ব্যাপক হারে মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে আর বিক্রিত দামেও চাষিরা অনেক খুশি।

বান্দরবান থানচি সড়কে ১৬ মাইল এলাকার টংকাবতি ইউনিয়ন ১ নম্বর ওর্য়াডের ইউপি সদস্য রেংরাও ম্রো বলেন, ‘নিজের ৩ একর জায়গার পাহাড়ের ঢালুতে আম বাগানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। গত বছরের করোনায় লকডাউনের সময়ে প্রতি মণ ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে ছিলো, তখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু এই বছর প্রতি মণে ৮০০ -৯০০ টাকায় বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পেরেছি।’

এম্পু পাড়ার মেনসিং ম্রো বলেন, গত বছর লকডাউনে বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ন্যায্য দাম না পেলেও এবার মণপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে চাষীরা। এবার মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন ও বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে চাষীরা অনেক খুশিও।’

ভাগ্যকুলে এলাকায় চাষী মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। এবারে বাগানের আম বিক্রি করে ক্ষতির দিকটা মিষ্টি কুমড়ার বিক্রি করে মোটামুটি পুষিয়ে নিতে পেরেছি। গত বছর প্রতি মণ ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এই বছর প্রতি মণ ৮০০-৯০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারছি।’

টংকাবতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্লুকান ম্রো বলেন, ‘এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে চাষীরা কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে অবগত হওয়ায় মাঝপথ থেকে সুযোগ করে নিতে পারছে না আর মধ্যস্থ ভোগীরা। ফলে উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছে চাষীরা। পাইকারি বিক্রেতারাও বান্দরবানের এ সুস্বাদু মিষ্টি কুমড়া পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।’

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বান্দরবানের পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী হওয়াই মিষ্টি কুমড়া দিন দিন এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেড়ে যাওয়াই কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।’

-সিভয়েস/এএম/এএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়