Cvoice24.com

থেমেছে গোলাগুলি, ‘অচল’ তুমব্রু

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২০ জানুয়ারি ২০২৩
থেমেছে গোলাগুলি, ‘অচল’ তুমব্রু

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় দুদিন পর গোলাগুলি থেমেছে। বৃহস্পতিবার সকালের পর থেকে আর কোন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি সেখানে। তবে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ওই এলাকায়। 

বন্ধ রয়েছে তুমব্রু বাজারের সমস্ত দোকানপাট এবং গৃহবন্দি হয়ে আছে স্থানীয় বাংলাদেশিরা। বওই এলাকার সাথে বাইরের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বলা যায়, ওই এলাকাকে কার্যত সিলাগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। 

অন্যদিকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই সশস্ত্র গ্রুপের কয়েক দফা গোলাগুলির পর ক্যাম্পটি এখন পরিণত হয়েছে বিরানভূমিতে। ক্যাম্প থেকে পালিয়ে স্থানীয় জনপদে আশ্রয় নিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। আবার অনেকে কাঁটাতার পার হয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছে।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, গত ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখায় ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই সশস্ত্র গ্রুপ আরএসও ও আরসার মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে একজন নিহত ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এই ঘটনায় ক্যাম্পের ৯৯ শতাংশ বসতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। উভয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বসতিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। ঘটনার শুরু থেকে অন্তত ১০দফা গোলাগুলি চালিয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দীল মোহাম্মদ ভুট্টো জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের দেয়া আগুনে ক্যাম্পের ৯৯ শতাংশ বসতি পুড়ে গেছে; যেখানে ৫৪০টি বসতি ছিলো। অবশিষ্ট যে বসতি রয়েছে তা সন্ত্রাসীদের আস্তানা হওয়ায় পোড়ানো যায়নি। এতে সাধারণ রোহিঙ্গারা ঘরছাড়া হয়ে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জিরোপয়েন্টে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পালিয়ে গেছে। ঘরহারা এসব রোহিঙ্গারা এখন নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। 

এই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, শুধু রোহিঙ্গারা নয়; দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এই সংঘর্ষে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের জীবনযাত্রাও থমকে গেছে। ঘটনার পর থেকে কার্যত অচল হয়ে গেছে তুমব্রু ও আশেপাশের এলাকা। গত দিন ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না তারা। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। কড়া পাহারা বসিয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। একইভাবে বাইরের কাউকে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি আগে থেকে বাইরে স্থানীয় বাসিন্দাদের এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

তুমব্রু উত্তরকুলের বাসিন্দা নূরুল আলম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছেন। পরিস্থিতি থমথমে থাকায় স্থানীয়দের বাজার ও রাস্তাঘাটে দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিজিবি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ প্রয়োজনে বের হলে সাথে রাখতে হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র।’ 

তুমব্রু বাজারের মুদি দোকানদার আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাজারে কেনাকাটা করতে লোকজন আসতে পারছে না। তাই দোকান বন্ধ রেখে বাড়িতে অবস্থান করছি। কিছু সময় দোকান খুললেও ভয়ে বেশিক্ষণ রাখা যায় না। 

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘ঘটনার পুরো তুমব্রু এলাকা অচল হয়ে আছে। স্থানীয়রা প্রয়োজনের বাইরে কোথাও যেতে পারছে না। আবার এলাকার বাইর থেকে কেউ বাইরেও যেতে পারছে না। প্রধান সড়ক ও উপসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিজিবি ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।’ 

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘সীমান্তের ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রপগুলো সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে ক্যাম্পের প্রায় সব বসতি পুড়ে গেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি। পরিস্থিতি খারাপ হলেও আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে আছে।’

ইউএনও বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয়দের জীবন কিছুটার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা হয়েছে। যাতে উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। তবে দুয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

তুমব্রর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমি সবসময় বলেছি, একসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হবে। ‘রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে ইয়াবার ব্যবসা করে। নিজেরা নিজেরা গোলাগুলি করছে, প্রতিদিন তারা মারামারি করছে।’

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্যে উখিয়া এমএসএফের হাসপাতাল থেকে  হামিদ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১২ বছরের এক শিশুসহ আরও দুজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে। এর মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়। সেখানকার তুমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা ক্যাম্পে ৬২১ পরিবারে চার হাজার ২৫৪ রোহিঙ্গা বাস করছে। অভিযোগ রয়েছে, এই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরএসও ও আরসা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়