বান্দরবানে আ. লীগ নেতারা উধাও, মাঠ এখন বিএনপির
ক্যমুই অং মারমা, বান্দরবান
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লা ও সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাসসহ ৩৬ জনের নামে হামলা ও ভাঙচুরসহ দুটি নাশকতা মামলা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) বান্দরবান পৌরসভার ওয়াবদা ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. শামীম হোসেন ও পৌর এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে বান্দরবান সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে জেলা আ.লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লা ও সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাসের নির্দেশে ছাত্রলীগসহ আ.লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে বাধা দেয় এবং এক পর্যায়ে তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এতে শহরের কাশেম পাড়া এলাকার বাসিন্দা মনির উদ্দিন ও নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাকিরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ছাত্র জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মো. শামীম হোসেন ও শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে বান্দরবান সদর থানায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ আসামী করা হয়।
আসামিরা হলেন, জেলা আ.লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লা, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মী পদ দাশ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুর, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ, সৌরভ দাশ শেখর, চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়া, কাঞ্চনজয় তংচঙ্গ্যা, অজিত কান্তি দাশ, সাদেক হোসেন চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, মো. মহিউদ্দিনসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জন।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখ গেলেও মামলার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা ছাড়াও কোনো পর্যায়ের নেতাদের খোঁজ মিলছে না। পাশাপাশি তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীরাও বন্ধ রেখেছেন মোবাইল নম্বর। আবার অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন আ.লীগের সাধারণ কর্মীরা।
জানা যায়, এরই মধ্যে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন বিএনপি, জামাতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচিগুলোতে।
অন্যদিকে, প্রায় দেড় দশক নীরব থাকার পর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে সরব রয়েছেন। দলীয় সদস্যদের নিয়ে করছেন মিটিং-মিছিল ও সভা। সমাগম বাড়ছে দলীয় কার্যালয়গুলোতে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর বিজয় উৎসবে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। এর মধ্যেই কিছু বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা আ.লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বঙ্গবন্ধু পাঠাগারসহ বেশ কিছু আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসায় হামলা চালায়। এরপর থেকে জেলার অধিকাংশ প্রভাবশালী আ.লীগ নেতারা ঘর থেকে বের হননি। এর মধ্যে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ১২০ জনের নামে মামলা হওয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ মধ্যমসারির নেতারাও।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, 'আমরা শিঘ্রই মাঠে নামবো। তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'