Cvoice24.com

প্রধানমন্ত্রীকে আনোয়ারায় আসার দাওয়াত দিলেন ঘর পাওয়া এয়ার মোহাম্মদ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ২৬ এপ্রিল ২০২২
প্রধানমন্ত্রীকে আনোয়ারায় আসার দাওয়াত দিলেন ঘর পাওয়া এয়ার মোহাম্মদ

আনোয়ার উপজেলার বারাখাইন ইউনিউনের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকলল্প এলাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন এয়ার মোহাম্মদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামের আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ায় আসার দাওয়াত দিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর উপহার পাওয়া আনোয়ারা উপজেলার বারাখাইন ইউনিউনের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকলল্পের এয়ার মোহাম্মদ। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সময় সুযোগ করে আসার বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন। 

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ঈদের উপহার হিসেবে প্রায় ৩৩ হাজার পরিবারকে ঘর তুলে দেওয়ার সময় গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আনোয়ার উপজেলার বারাখাইন ইউনিউনের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকলল্প এলাকা থেকে যুক্ত হন এয়ার মোহাম্মদ। এদিন চট্টগ্রামের আনোয়ারার ১৩০টিসহ চট্টগ্রামের ১৪ টি উপজেলায় ১২১৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়।  

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় বারাখাইন ইউনিউনের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকলল্পের এয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?

তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

এরপর এয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমি একজন নদী ভাঙন মানুষ, ভূমিহীন। আমার কিছু নেই, ঘর-বাড়ি নেই। আমি জেলে কাজ করি। সাগরে মাছ ধরি। কোনো রহমতে পুলাপায়ন লইয়া ভাত খাই। আমার কিছু নেই, থাকার জায়গা নাই। একদম নিঃস্ব আমি, আমার কোনো আশ্রয় ছিল না। আমার মা-বাবা কোনো দিন আমাকে আশ্রয় দিতে পারে নাই।’

তিনি বলেন, ‘এ যে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমি একজন জেলে মানুষকে তোয়াইয়া (খুঁজে) ঘর দিছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমি অনেক কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এখন আমি অনেক খুশি হইতেছি, আমাকে একটা পাকা ঘর দিয়েছেন, ২ শতক জমি দিয়েছেন। অন্তত আমাকে আমার বিবেক অনুযায়ী আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমারে ২০ লাখ টাকার মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি। আপনার কাছে অনেক ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে আপনার জন্য খোদার কাছে অনেক প্রার্থনা করবো। আপনি দীর্ঘদিন থাকেন।’

এসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার করে বসেন এয়ার মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমার শেষ ইচ্ছে আরেকটা আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাকে আনোয়ারা মোহছেন আউলিয়ার পাশে একটা ঘর দিয়েছেন। দামি পাকা ঘর। আমরা এখানে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করবো। আপনি যদি আমাকে একটু দেখতে আসেন, আমরা সবাই আপনার মেহনতি মানুষরা খুশি হবো। এ বলে আমার বক্তব্যে আমি শেষ করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসসালামু আলাইকুম।’  

প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। অবশ্যই আমি চেষ্টা করবো। যদি পারি আসতে, আসবো। আপনারা সবাই ভালো থাকেন। আর আপনারা যে খুশি আছেন, এটাই আমার সব থেকে বড় খুশি।’

এসময় সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওরা সবাই একটা দাবি জানিয়েছে। আপনাকে যেন সবার পক্ষ থেকে আমরা অগ্রিম ঈদ মোবারক জানাই। তখন সবাই একযোগে বল ওঠেন— ঈদ মোবারক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’

প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘সবাইকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক আরও জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরগুলো এবারের ঈদ উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের সঙ্গে চট্টগ্রামের ১৪ টি উপজেলায় ১২১৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়।  

এর মধ্যে পটিয়া উপজেলায় ৮৫টি, কর্ণফুলীতে ১০টি, আনোয়ারায় ১৩০টি, বোয়ালখালীতে ৪৫টি, চন্দনাইশে ৬৫টি, সাতকানিয়ায় ২৮টি,‌ লোহাগাড়ায় ১৪৫টি, বাঁশখালীতে ১২০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৭০টি, রাউজানে ৫৬টি, হাটহাজারীতে ২৪টি, ফটিকছড়িতে ৩৯০টি, সীতাকুণ্ডে ২৮টি ও‌ মিরসরাইয়ে ২০টি সহ সর্বমোট ১২১৬টি ভূমিহীন অগ্রিম পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আরো জানান, এর আগে চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৪৪৪টি  এবং ২য় পর্যায়ে ৬৪৯ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হয়। 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ৩য় পর্যায়ে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম আনোয়ারা উপজেলার ৬নং বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,‌ বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপকারভোগী ও প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়