Cvoice24.com

বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু, মোট সাত

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০২১
বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু, মোট সাত

ফাইল ছবি

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইফতারের জন্য সময় বরাদ্দসহ ১০ দফা দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরও দুই শ্রমিক মারা গেছেন। একজন বুধবার সন্ধ্যায় আরেকজন গত সোমবার রাতে মারা যান।

বুধবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান শিমুল আহমেদ (২৩)। তিনি মৌলভীবজার জেলার শ্রীমঙ্গল  উপজেলার  আব্দুল মালেকের ছেলে।

সোমবার নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রামের রাজেউল ইসলাম (২৫)। নিহত রাজেউল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান মণ্ডলের ছেলে এবং বাঁশখালীর এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের ফিল্টারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এ নিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডমারা এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে।

শিমুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ওসি জহিরুল ইসলাম। আর রাজেউলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‌‌‘গুলিবিদ্ধ শ্রমিকদের মধ্যে একজন ছিলেন ফুলবাড়ীর রাজেউল ইসলাম। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করান। ১৮ এপ্রিল (রবিবার) তার অপারেশন করা হয়। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় ১৯ এপ্রিল সোমবার রাত দেড়টার দিকে মারা যান তিনি।’

‘তিন দিন আগে রাজেউলের পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি রাজেউল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে তাদের মুভমেন্ট পাস দেওয়া হয় সেখানে যাওয়ার জন্য। পরে মঙ্গলবার রাতে জানতে পারলাম রাজেউল মারা গেছে। রাতেই তার দাফন হয়।’- যোগ করেন ইউএনও। 

অন্যদিকে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শিমুল সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মারা যান। তার মরদেহ মর্গে রয়েছে।’

চমেক সূত্র জানায়, বাশঁখালীর বিদুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কোমরের নিচে গুলি লেগেছিল শিমুলের। পরে  তিনি চমেকের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

এরাগে গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) পৌনে ১২টায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বিক্ষোভ থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ শ্রমিক নিহত হয়। এতে ১৭ জন গুলিবিদ্ধসহ আরও ৫০ জন আহত হয়েছে। 

নিহতরা হলেন- আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মো. রাহাত (২৪) ও রায়হান (২৫)।

অন্যদিকে আহতরা হলেন— হাবিব উল্লাহ (২১), মো. রাহাত (৩০), মিজান (২২), মো. মুরাদ (২৫), মো. শাকিল (২৩), মো. কামরুল (২৬), মাসুম আহমদ (২৪), আমিনুল হক (২৫), মো. দিদার (২৩), ওমর (২০) ও অভি (২০)। 

এছাড়াও গণ্ডামারা পুলিশ ফাঁড়ির তিন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন— ইয়াসির (২৪), আব্দুল কবির ও (২৬), আসাদুজ্জামান (২৩)।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে...

বাঁশখালীতে এস আলমের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় ‘হামলাকারী’ শ্রমিকদের নামে দুইটি মামলা দায়ের হয়েছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ একটি আর পুলিশ একটি মামলা করে। দুই মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অন্তত অজ্ঞাত সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। থানার এক এসআই বাদি হয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা, হামলার অভিযোগ দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে এসএস পাওয়াপ্ল্যান্টের চীফ কোর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আজ্ঞাত আরও ১ হাজার ৫০ জনকে আসামি করে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের একটি মামলা করেন। 

এস এস পাওয়ার প্লান্টে পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হলেও পুলিশ এখন বলছে, তাদের গুলিতে নয়; শ্রমিকদের গুলিতেই তারা নিহত ও আহত হয়েছে। এমন দাবি করেছে বাঁশখালী থানায় ঘটনার পর দায়ের করা পুলিশের মামলার এজহারে। যদিও ঘটনাস্থলে আহত একাধিক শ্রমিক জানিয়েছিলেন, পুলিশই তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।

পুলিশের গুলি করার বিষয়টি এজহারে স্বীকার না করলেও ওই সময়ে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, এসপি, ওসি সকলেই। এমনকি এসপি রশীদুল হক একটি পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘পুলিশকে লক্ষ্য করে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কয়েকজনের হাতে অস্ত্রও ছিল। সম্পদ রক্ষা ও আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছোড়েন। এর আগে টিয়ার গ্যাস, ২৭০ টি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়