Cvoice24.com

ভাষা জটিলতায় দীর্ঘদিনের শ্রমিক অসন্তোষ থেকেই বিক্ষোভ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১০, ২২ মে ২০২১
ভাষা জটিলতায় দীর্ঘদিনের শ্রমিক অসন্তোষ থেকেই বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতিনিধি হয়ে চীনাদের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে জনবল নিয়োগের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির কিছু বাংলাদেশি দোভাষী। তাদের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা আর ‘ভুল’ বোঝানোর প্রবণতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এমনিতে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সাথে দেশিয় শ্রমিকদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এই বিরোধের পেছনে ভাষাগত জটিলতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে দুষেছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় করা সরকারি দুই তদন্ত কমিটি। 

কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ঘটনার দিন সেখানে শ্রমিকদের সাথে প্রথমে বহিরাগতদের পরে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ ‘আত্মরক্ষায়’ ও চীনা কর্মীদের জীবন বাঁচাতে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। 

জেলা পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে, বাঁশখালীতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঠিক সময়ে বেতন না দেওয়া, রমজানে ইফতার-সেহরির সময় না দেওয়া ও শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসে বাধ্য করার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে কমিটি। তবে শ্রমিকদের এসব বার্তা ‘যথাযথভাবে’ চীনা কর্তৃপক্ষের কানে না পৌঁছুনোর জন্য দোভাষীদের দায়ী করা হয়েছে। 

সংঘর্ষে পুলিশের করা কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জাকির হোসেন খান জানান, গেল বুধবার (১৯ মে) চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। এতে সংঘর্ষের পেছনে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া, ভাষাগত জটিলতা, পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হতাহত হওয়া, বহিরাগতদের মদদসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভবিষ্যতে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য করা হয়েছে নয়টি সুপারিশ। 

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা আমাদের জানিয়েছে তারা ম্যান পাওয়ার কোম্পানিকে এসব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বললেও ওরা কথাগুলো সঠিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষকে উপস্থাপন করে না। তাই এখানে ভাষা একটি বড় সমস্যা, যা আমরা সুপারিশে দিয়েছি।’  

ঘটনার দিন পুলিশের গুলিতেই শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ছিল মাত্র ১২ বা ১৩ জন। ওরা ছিল সংখ্যায় চার পাঁচ হাজার। তারা পুলিশকে আক্রমণ করেছিল এবং ইটের আঘাতে পুলিশেরা মারাত্মক আহত হচ্ছিল। তখন যদি সেখানে তাদের গুলি করে না থামানো হতো তবে তারা চীনাদের ডর্মের দিকে এসে আগুন দিত। ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো। তাই আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায় এবং এতে কিছু শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়।’

জাকির হোসেন খান আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় বহিরাগত রশিদ ডাকাত ও স্থানীয় কিছু উস্কানিদাতা সংঘর্ষকে আরও ভয়াবহ করতে ভূমিকা রাখে। তবে আমাদের পুলিশের উপর তাদের দিক থেকে কোন গুলি ছোড়া হয়নি।’ 

সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রিপোর্টের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এটি কনফিডেন্সিয়াল উল্লেখ করে এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য দিতে চাননি তিনি। 

ঘটনার পেছনে কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রাজনৈতিক কোন কিছু নয় আমরা এখানে রশিদ নামে এক স্থানীয় লোকের ইন্ধন ও উস্কানি আছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। ঘটনার দিন সেখানে শ্রমিকদের সাথে তার পক্ষের লোকজনের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সে বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঘটনার দিন আন্দোলনের সময় রশিদ ভেতরে প্রবেশ করেছিল। এ সময় রশিদ অযাচিতভাবে শ্রমিকদের আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করছিল, সে শ্রমিকদের গায়ে হাতও তুলেছে। এরপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ঘটনা রূপ নেয় ত্রিমুখী সংঘর্ষে।’

তিনি বলেন, অনেকেই বলেছে রশিদ শ্রমিকদের পক্ষে আবার অনেকেই জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের হয়ে উস্কানি দিয়েছে। যদিও তদন্তে আমরা বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানতে পারিনি। 

পুলিশের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সময় মতো শ্রমিকদের মজুরি প্রদান, শ্রমিক কল্যাণ সভা করা, চীনা ও বাংলাদেশিদের মধ্যে ভাষাগত সমস্যা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরিসহ ৯টি সুপারিশ করেছে। তবে জেলা প্রশাসনের সুপারিশগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।

গেল ১৭ এপ্রিল শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে ৭ শ্রমিক নিহত ও অন্তত ৩০ শ্রমিক গুরুতর আহত হন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়