বাঁশখালীতে গত আট মাসে ৭০৪ নারীর নরমাল ডেলিভারি
বাঁশখালী প্রতিনিধি
অধিকাংশ প্রসূতি নারীর (স্বাভাবিক প্রসব) নরমাল ডেলিভারি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা। এ অঞ্চলের গর্ভবতী মায়েরা দিনের পর দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারিতে আগ্রহী। গত আট মাসে ৭০৪ টি বাচ্চা নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব করানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার।বর্তমানে সব প্রসূতি ও তাদের নবজাতকেরা সুস্থ আছেন। গত ৮ মাসে ৭০৪ নারীর স্বাভাবিক প্রসব সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলছে, চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে গত জানুয়ারী মাসে ৮১ টি, ফেব্রুয়ারীতে ৮০ টি, মার্চ মাসে ৭৯ টি এপ্রিল ৯৩ টি, মে মাসে ৮৩ টি, জুন মাসে ৮৫ টি, জুলাই ৯৯ টি এবং এর মধ্যে গতমাসে ১০৪ টি সহ গত আট মাসে ৭০৪ টি নরমাল ডেলিভারি করিয়ে প্রায় শতভাগ সফল হয়েছেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। অন্যদিকে এ আট মাসে প্রসব পূর্ববর্তী (এএনসি) সেবা নিয়েছে ১ হাজার ৯ শত ৮৩ জন এবং প্রসব পরবর্তী (পিএনসি) সেবা নিয়েছে ৮১০ জন।
এছাড়াও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, ওআরটি কর্নার, এএনসি ও পিএনসি এবং কেএমসি কর্নার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র এবং অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার নেতৃত্বে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফরা টিম ওয়ার্ক শুরু করেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন।
এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের সি.এইচ.সি.পি, স্বাস্থ্য সহকারী,শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি হওয়া ছনুয়া ইউনিয়নের মুন্নি আক্তার, চাম্বল এলাকার সুমি আক্তার, নাপোড়া এলাকার লাকি আক্তার, বাহারচড়া ইউপি ইলশা গ্রামের শামীমা আক্তার, দক্ষিণ জলদী এলাকার প্রিয়ন্তী দাশ বলেছেন, নরমাল ডেলিভারি কথা ভেবে শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী ও চিকিৎসকদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এতে তারা একদিকে যেমন খরচ থেকে বাঁচলেন অন্যদিকে প্রসবকারী মা ও সন্তান সুস্থ থাকলেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ায় তারা অনেক খুশি।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসুন সাহা জানান, প্রসূতি মৃত্যুর হার কমাতে এবং হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছেন, যার ফলে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে, পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে।
এ বিষয়ে ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, গত আট মাসে ৭০৪ জন মায়ের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের সরাসরি ও মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হয়। যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো এবং এর জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করা, কারণ একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি মা ও শিশুর নিরাপদ নিশ্চিত করে,আর আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি। এই জন্য সকলের সর্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সরকারিভাবে আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী ও প্রদান করে থাকি।