Cvoice24.com

হিন্দু রীতিতে পুড়লো মুসলিম নারীর লাশ, বোয়ালখালীতে স্বামী গ্রেপ্তার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০০, ২০ আগস্ট ২০২১
হিন্দু রীতিতে পুড়লো মুসলিম নারীর লাশ, বোয়ালখালীতে স্বামী গ্রেপ্তার

ইয়াছমিন আক্তার এনি (২৪) ও বাবলু দে প্রকাশ তনু (৩০)। দুজন দু ধর্মের। বাবলু ধর্ম পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যে পরিচয়ে মুসলিম তরুণী এনির সঙ্গে গড়েন প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে বিয়ে করে সংসারও পাতেন। সেই সংসারে আলো ছড়ায় দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তানও। তবে সবকিছু ধুলিসাৎ হয়েছে মিনিটেই।

গত ৩ আগস্ট ওই তরুণীকে নির্যাতন করে হত্যার পর হিন্দু রীতিতে পুড়িয়ে ফেলে বাবলু। মুসলিম মেয়েকে জামাই কেন হিন্দু রীতিতে পোড়ালো— এই নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এনিয়ে মেয়েটির পরিবার স্বামীকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

মামলার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত ওই তরুণীর স্বামী বাবলু দে তনুকে (৩০) উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা বীণাপানি সংঘ পুজামণ্ডপ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। 

এর আগে, গত ১৬ আগস্ট নিহত তরুণীর মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনির স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকারম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরীকেও আসামি করা হয়।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— মোহাম্মদ মোকারম (৫৬), পবন দাশ (৫৫), রতন চৌধুরী, সাধন মহাজন (৬০), নিমাই দে (৪৫), শংকর দত্ত (৩৩), অরবিন্দ মহাজন (৫০), অরুন দাশ (৫০), দিলীপ দেব (৪৫), প্রদীপ সুত্রধর (৪০), রাম প্রসাদ (৩৮), রনি দে (৩০), অরুপ মহাজন (৪২), সমর দাশ (৫৫), রবীন্দ্র ধর (৬০), নিপুন সেন (৬০) ও ইউসুফ প্রকাশ ড্রেজার ইউসুফ (৩৫) ।

জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে নিহত এনির খালাতো বোন হাসিকে স্বামী বাবুল মুঠোফোনে জানান, এনি মারা গেছেন। হাসি এনির পরিবারকে খবরটি দেন। এনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে স্বামী জানান। এনির মা লাশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দেবেন বলে জানান। কিন্তু ওই রাতেই বাবুলের ভাই পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে এনির মাকে যেতে বারণ করেন। তাকে জানানো হয়, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে লাশ সৎকার করা হয়েছে। একজন মুসলিম মেয়েকে কীভাবে সৎকার করেছেন জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শে লাশ আগুনে পুড়িয়ে সৎকার করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) সুমন দে সিভয়েসকে বলেন, ‘ওই গৃহবধূ মুসলিম পরিবারের মেয়ে। মারা যাওয়ার পর তার লাশ আগুনে পুড়ে ফেলায় নিহতের মা এ ঘটনায় আদালতে স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মামলা দায়ের করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বোয়ালখালী থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই গৃহবধূর স্বামী বাবলু দে একটি সেলুনের দোকানে কাজ করতেন। ঘটনার পর সেখান থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে পালানোর প্রস্তুতিকালে বৃহস্পতিবার রাত ১টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

উল্লেখ্য, নগরের বন্দরটিলায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় ওই এলাকার সেলুনের কর্মচারী বাবলু দে’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ইয়াছমিন আকতার এনির। তিন বছর আগে তারা পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করে। এক বছর শহরে থাকার পর গত দুই বছর ধরে তারা জ্যৈষ্ঠপুরায় চলে আসে। বাবলু মুসলিম মেয়ে বিয়ে করেছে এটা এলাকায় কেউ জানত না বলে দাবি স্থানীয়দের।

-সিভয়েস/আইএইচ/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়