Cvoice24.com

দুবাই রপ্তানি হচ্ছে চন্দনাইশের লেবু

মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ

প্রকাশিত: ২০:৪১, ১৮ এপ্রিল ২০২১
দুবাই রপ্তানি হচ্ছে চন্দনাইশের লেবু

বিক্রির জন্যে বাছাই হচ্ছে বাগান থেকে তুলে আনা লেবু। ছবি: সিভয়েস

চন্দনাইশের বিস্তৃর্ণ পাহাড়ে উৎপন্ন লেবু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে আরব আমিরাতে দুবাইতে। প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১শ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩শ কেজি পর্যন্ত লেবু রপ্তানি হয় দেশটিতে। দামও বেশ। কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।  এছাড়া এ উপজেলা থেকেই ট্রাক, বাস এবং ট্রেনে করে যাচ্ছে রাজধানীর কাওরান বাজার, সেনবাজার, মগবাজার, সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়ন, দোহাজারী ইউনিয়নের লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, হাশিমপুরের ছৈয়দাবাদ, কাঞ্চনাবাদের লর্ড এলাহাবাদে প্রচুর লেবুর বাগান রয়েছে। মূলত উপজেলার ১৫শ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি লেবুর চাষ হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বাগানে ফুল আসে। জৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস জুড়ে সেখান থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। অন্যদিকে করোনার কারণে লেবুর চাহিদাও ব্যাপক। সবমিলিয়ে বেশ চাঙ্গা লেবুর বাজার।

চাষী ও পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী মিলে এ খাতে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার লোক জড়িত। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাগান মালিকরা লেবু নিয়ে এসে উপজেলার দোহাজারী, কাঞ্চননগর, বাদামতল, খাঁনহাট রেল স্টেশন ও বাগিচাহাটে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখেন বাজার লেবু বিক্রির প্রধান কেন্দ্রস্থলে।

স্থানীয়ভাবে লেবুর দুই টুকরি বা ঝুড়ি নিলে এক ভার হয়। সে রকম প্রতি ভারে ৫শ থেকে ৬শ পর্যন্ত লেবু থাকে। বর্তমানে প্রতি ভার লেবুর দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের তুলনায় এবার ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি, রোজা, প্রচণ্ড গরম সবমিলিয়ে এবার লেবুর চাহিদা তুঙ্গে। তাই চাষী, খুচরা-পাইকারি বিক্রেতা সবাই আর্থিকভাবে লাভবান। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য খ্যাত এ লেবু পুষ্ট, অপেক্ষাকৃত বড় ও দেখতে সুন্দর। এসব লেবু রপ্তানি সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সংরক্ষণের জন্য হিমাগার পাশাপাশি একটি বিশেষায়িত অঞ্চল গড়ে তোলার জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কাগজী লেবু, পাতী, এলাচী, বাতাবী ও নতুন জাতের হাইব্রীড সিডলেস নামে একটি জাতের লেবুর চাষ হচ্ছে। যদিও কাগজি লেবু একটু ছোট আকৃতির। চট্টগ্রামেই সবচেয়ে বেশি লেবু উৎপন্ন হচ্ছে। যা দেশের আর কোথাও হয়না। চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়ন জুড়ে, দোহাজারী ইউনিয়নের লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, হাশিমপুরের ছৈয়দাবাদ, কাঞ্চনাবাদের লর্ড এলাহাবাদের ১৫শ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। এখান থেকে উৎপাদিত লেবু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। 

অন্যদিকে চাষের সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, চন্দনাইশে হাজার হাজার বনভূমি পড়ে আছে। এরমধ্যে মাত্র কয়েকশ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। শুধুমাত্র অর্থায়ন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এসব বনভূমি পড়ে আছে। তাদের অভিযোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবুও প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার লেবু উৎপাদন হলেও হিমাগারের অভাবে বাজার হারাচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ পেলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে আর্থিক কোন সুবিধা পান না তারা। লেবু চাষে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সুদমুক্ত ঋণ হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

চন্দনাইশের হাশিমপুর এলাকার মো. আবদুর রহিম, আবদুর রউফ, মান্নান, নন্না ও মোহাম্মদ এমরান কয়েকশ হেক্টরজুড়ে লেবু বাগান করেছেন। তারা সিভয়েসকে জানান, বাগানে প্রচুর লেবুর ফলন হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং হিমাগার না থাকায় মালিকরা তাদের ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা পরিত্যক্ত পাহাড়ি ভূমি চাষিদের লিজ দিয়ে লেবু চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তাহলেই বিশেষায়িত জমি তৈরি করে পুষ্ট ও ভালো মানের রপ্তানিযোগ্য লেবু উৎপাদন করা যাবে। 
 
উপজেলার ছৈয়দাবাদ এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবু তাহের, মোহাম্মদ ওয়াশিম ও মোহাম্মদ জানু সিভয়েসকে জানান, তারা লেবু বাগানে মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি লেবু ৫/৬ টাকা দরে কিনে নেন। তারপর বিভিন্ন জেলায় লেবু সরবরাহ করেন। বাজারে খুচরা এক একটি লেবু বিশেষ ৮ থেকে ১৫ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। 
 
চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মু.আবদুল জব্বার চৌধুরী সিভয়েসকে জানান, তিনি করোনা পরিস্থিতি ছাড়া দুবাই প্রতিদিন ১শ থেকে ৩শ কেজি পর্যন্ত লেবু কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিদেশেও রপ্তানি করে থাকেন। এছাড়াও তিনি শসা, লাউ, চালকুমড়া, বরবটি, তীতকরলা পেয়ারাসহ বিভিন্ন পণ্য দুবাই ও কাতারে রপ্তানি করেন। এতে বছরে তিনি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক তার ক্ষেতে কাজ করেন। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার সিভয়েসকে বলেন, শুধু চন্দনাইশ ১৫শ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে ২০২১ সালে মোট উৎপাদন ১২ হাজার টন, প্রতি হেক্টর ৮ টন লেবুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আমরা নিয়মিত চাষীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু চাষিদের লেবু বাগান রোগমুক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়