Cvoice24.com

৩৭ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি খেলার মাঠে

মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ৬ মে ২০২১
৩৭ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি খেলার মাঠে

ছবি: সিভয়েস

চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে স্টেডিয়াম। একদিকে খেলার মাঠ, অন্যদিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সভা-সমাবেশের অন্যতম স্থান। দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়ের যেমন পদাচরণ হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা নেত্রীরও আগমন হয়েছে এই মাঠে । কানায় কানায় পূর্ণ মাঠে বক্তৃতা করে গেছেন বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বহু রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আমলা। তবুও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বিন্দুমাত্র।

অথচ ১৯৮৪ সালে মাঠটিকে স্টেডিয়াম বানাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেন তৎকালীন ইউএনও। সেসময় মাঠের একপাশে দুটি গ্যালারি বানানো হয়। এরপর থেকে আর কোন কাজই হয়নি। এমনকি দীর্ঘ তিন দশক আগে বানানো গ্যালারিটি ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে পড়লেও সামান্য সংস্কার পর্যন্ত হয়নি। সংস্কারের অভাবে এখন গোচারণ ভূমি হয়ে পড়েছে ঐতিহাসিক মাঠটি।

জানা যায়, ১৯১৮ সালে গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১.৬২ শতাংশ আয়তনের খেলাধুলার বিশাল মাঠটি তৈরি করা হয়। সেসময় থেকে খেলাধুলার একমাত্র মাঠ হিসেবে এটির ব্যবহার শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমী ও উপজেলা প্রশাসন। এরপর পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জোনাল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, স্থানীয় ও জাতীয় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবই হয়ে আসছে। মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো নামিদামি ক্রীড়া চক্রের অংশগ্রহণে খেলার আসর বসতো নিয়মিত। এসব আসরে সমাগম ঘটতো দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়ের। আর এসব খেলা দেখতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বান্দরবান, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চকরিয়া থেকে ভিড় জমাতো হাজার হাজার দর্শক।

এছাড়া এ মাঠের পশ্চিমে কলেজের ভবন স্থানান্তরিত হওয়ায় বর্তমানে গাছবাড়িয়া কলেজের নৈসর্গিক শোভা বৃদ্ধির পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিও করার সুযোগ হয়েছে। মাঠের পূর্ব দিকে হাশিমপুর মকবুলিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, দক্ষিণে মমতাজ বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, পিপিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ও রয়েছে। গাছবাড়িয়া খাঁনহাট বাজারটিও এটির সংলগ্ন হওয়ায় শনিবার, বুধবার বাঁশ বেত ইত্যাদি মাঠের পূর্ব সীমানায় বিক্রি হতো। 

তাছাড়াও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন সহ বিভিন্ন নির্বাচনী সভা এ মাঠে অনুষ্ঠিত হত। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রধানরাও এ মাঠে জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও এ মাঠে বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। বিভিন্ন এক্সিবিশন, বৃক্ষ মেলা, বিজয় মেলা, কৃষি মেলা, ইত্যাদিও এমাঠে হতো। তা ছাড়াও প্রতিবছরে অতন্ত দশ-বিশটি ধর্মীয় মাহফিল, মিলাদুন্নবী (সা:) ও ইসলামি সম্মেলনের আয়োজন হয় এখানে।

১৯৮৩ সালে চন্দনাইশ উপজেলা উন্নীত হওয়ার পর উপজেলার পর্যায়ে ছোট-বড় সকল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় এ মাঠে। মাঠের গুরুত্ব অনুধাবন করে পরের বছর বিদ্যালয়ের খেলার মাঠকে সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী চন্দনাইশ উপজেলা স্টেডিয়ামে  রূপান্তরিত করার প্রস্তাবে গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চুক্তি হয়। সেসময় মাঠের একপাশে দুটি গ্যালারি বানানো হয়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যালারি দুটির অবস্থা জরাজীর্ণ-ভঙ্গুর। দক্ষিণ পাশে দোকান নির্মাণ করায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশন। ফলে বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত মাঠটিতে সৃষ্টি হয় ছোট-বড় গর্ত। এতে করে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে মাঠটি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় মাঠটি পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে।

এ ব্যাপারে গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, এ মাঠটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর তৈরি করে আগের গ্যালারি গুলো সংস্কার ও নতুন গ্যালারি প্যাভিলিয়ান তৈরি করা প্রয়োজন। মাঠটিকে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রূপান্তারিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক এ মাঠটি অবহেলিত। সরকার সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে এ মাঠটিকে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রুপান্তর করা যায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। ক্রীড়াপ্রেমীদের ভালোবাসার মাঠটির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমার নিরলস চেষ্টা থাকবে।

স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদের কাছে মাঠটির আধুনিকায়ন করে আবারও পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়