Cvoice24.com

শুক্লাম্বর দীঘির প্রাচীন মেলায় লাখো পূণ্যার্থীর ভিড়

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২২
শুক্লাম্বর দীঘির প্রাচীন মেলায় লাখো পূণ্যার্থীর ভিড়

মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে লাখো পূর্ণার্থীর ভীড় শুক্লাম্বর দীঘিতে।

চন্দনাইশ উপজেলার বরমা সুচিয়া বাইনজুরী গ্রামে লাখো নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে যথাযথ মর্যাদায় সম্পন্ন হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের শুক্লাম্বর দীঘির প্রাচীন মেলা।

গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) প্রাচীনতম ঐতিহাসিক এ শুক্লাম্বর দীঘির পূর্ণ্য স্থান উৎসব উদযাপন হয়। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এই মেলা বসে। 

উপজেলার বরমার সনাতন সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী শুক্লাম্বর দীঘি ও তৎসংলগ্ন প্রায় ১২/১৫ একর বিশাল এলাকা ও ২/৩ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এ মেলা বসে। একদিন হলেও আগের দিন বিকেল হতে পূণ্যার্থী, তীর্থযাত্রী, দোকানী ও পূজারীদের আগমন ঘটে। সকালে দেখা যায়, মেলাঙ্গনে উপচেপড়া মানুষের ভিড় জমে। কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই থাকেনা।

প্রতিবছরের মতো এবারও পৌষ সংক্রান্তিতে চন্দনাইশের শুক্লাম্বর দীঘির মেলায় ঢল নেমেছিল মানুষের। আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল থেকেই দিঘিরপাড় মুখরিত হয়ে উঠেছিল পুণ্যার্থীদের পদচারণায়। আত্মশুদ্ধি, পাপমুক্তি ও মনোবাসনা পূরণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এখানে এসেছেন। মনোবাসনা পূরণের জন্য দীঘিতে আসা পুণ্যার্থীদের অনেকে অশ্বত্থ গাছের নিচে কবুতর উড়িয়ে দেন। আবার কেউ কেউ দিঘিতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে স্নান করেন। অনেকে দিঘীর জলে ঢেলেছেন তরল দুধ।

মনের ইচ্ছে পূরণের জন্য অশ্বত্থ গাছের ডালে সুতা বাঁধছিলেন মেলায় আগত নবদম্পতি শাপলা ধর ও তাঁর স্বামী নয়ন ধর। অনেকের কাছে এই মেলার কথা শুনেছেন তারা, এবার আসতে পেরে ভীষণ খুশি বলে জানালেন তাঁরা। হাটহাজারী থেকে রাহুল ধর, বিজন চক্রবর্তী ও সাতকানিয়া থেকে মেলায় এসেছেন রঞ্জিত বিশ্বাস।
তাঁরা জানান, এই মেলায় এলে মনোবাসনা পূরণ হয়। এখানে এলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। কনকনে শীত উপেক্ষা করে পাপমুক্ত নতুন জীবন লাভের আশায় দিঘির জলে স্নান করতে নেমেছিলেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ। সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদেরও সমাবেশ ঘটে। তাদেরও সামাজিক উৎসবে পরিণত হয় বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

মেলায় নাগরদোলাসহ বিভিন্ন ধরনের বেতের তৈরি টুকরি, বড় ঝুড়ি, চালুনি, কুলা, মোড়া, দা-বটি-ছোরা, যাঁতা, মাটির ঘটি-বাটি, শীতের সবজি, মানকচু, শাপলা মাছ, ইলিশ, দেশি পুকুরের মাছ, চটপটি, বিনি ধানের খই, যব ধানের খই, বাতাসা, গস্যার টফি, বাদামের টফি, নিমকি বিস্কুট, নকুল দানা, কদমা, গজা, নারকেলের চিড়া ছাড়াও আরো অনেক খাবার, প্রসাধনী ও বিভিন্ন রকমের দোকান বসে। প্রতি বছরের মত এবারও পৌষ সংক্রান্তির মেলায় পার্শ্ববতী ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন মানত নিয়ে এ পীঠমন্দিরে আসে তাদের মনোবাসনা পূরণের অভিপ্রায়ে। তাদের বিশ্বাস এ মেলায় যারা বিভিন্ন মনোবাসনা নিয়ে আসেন তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ হয়।

শুধু পৌষ সংক্রান্তিতে সারা বছর বিভিন্ন মানস পূরণের লক্ষ্যে দীঘিতে দুধ উৎসর্গ, ছাগল ও কবুতর, ফল-ফলাদি ইত্যাদি দেয় বলে জানা যায়। তবে বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে পৌষ সংক্রান্তির মেলায় শুক্লাম্বর দীঘি মিলন মেলায় ভরে উঠে। দিনব্যাপী চলে উৎসব।  সে সাথে প্রত্যেকে স্ব-স্ব ধ্যানে-জ্ঞানে মগ্ন থাকেন পূজা অর্চনায়। পূর্ণার্থীদের ভিড়ে এ দিনটি উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য ত্রিপাঠির নামেই এই মেলার নামকরণ। প্রায় ৪০০ বছর আগে ভারতের নদিয়া এলাকায় জন্ম হয় তাঁর। ৪০ বছর বয়সে সনাতন ধর্ম প্রচারের জন্য ভারত থেকে চন্দনাইশের বরমায় আসেন তিনি। বরমায় বেশ কিছু জমি কিনে শিবমন্দির তৈরির মাধ্যমে ধর্মপ্রচার ও জনসেবা শুরু করেন। এই শুক্লাম্বর দিঘীর মেলায় সনাতন ধর্মের লোক ছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার নারী পুরুষ মেলা দেখতে আসেন।

এমেলা কমিটির সভাপতি হলেন বরমা ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম টিটু। মেলা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিভিন স্তরের নেতৃবৃন্দ। 

মেলা চলাকালীন সময়ে, মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম টিটু, দীঘির উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হারাধন দেব, সিনিয়র সহ-সভাপতি অরুপ রতন চক্রবতী, সাধারণ সম্পাদক নিপেন্দু দত্ত, মেলা কমিটির সম্পাদক পরিমল মহাজন জানান, ঐতিহ্যবাহী মেলাটি সুশৃঙ্খলভাবে উপজেলা প্রশাসন ও চন্দনাইশ থানা পুলিশ সহ সকলের সহযোগিতায় সম্পন্ন করতে পেরেছেন ।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়