Cvoice24.com

চন্দনাইশের ‘মন হনিমার টেক’ যেন মৃত্যুফাঁদ

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২১ জানুয়ারি ২০২২
চন্দনাইশের ‘মন হনিমার টেক’ যেন মৃত্যুফাঁদ

মন হনিমার টেক। -ছবিঃ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ হাশিমপুর ভাণ্ডারী পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সামনের বিপজ্জনক বাঁক ‘মন হনিমার টেক’ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা; ঝরছে প্রাণ। এই বাঁক ছাড়াও কর্ণফুলী সেতু থেকে চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ নদীর ব্রিজ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কে অন্তত বিপজ্জনক ৪০ থেকে ৪৫টি বাঁক রয়েছে। এসব বাঁক যেন একেকটি মরণফাঁদ।

চালকদের দাবি— বিপজ্জনক এ বাঁকগুলোর কারণে ৪৫ কিলোমিটার (চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ সেতু থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত) সড়ক পাড়ি দিতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।

বিপজ্জনক বাঁকগুলো হচ্ছে— পটিয়া মইজ্জার টেক, পটিয়া-আনোয়ারা ক্রসিং, মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, নিমতল দরগাহ, আমজুরহাট, পটিয়া পোস্ট অফিস, আদালত গেট মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, বাসস্টেশন, কমলমুন্সীর হাট, রৌশনহাট, বাদামতল, খাঁনহাট, কলেজ গেইট, বাগিচাহাট, বড়পাড়া, দোহাজারী মিলে ৩০টি পয়েন্টে এবং মহাসড়কের বাকি অংশেও একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাঁক সোজা করার একটি প্রকল্প কয়েক বছর আগে গ্রহণ করা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাও কমছে না।

এদিকে পুলিশের দাবি— মহাসড়কের এ বিপজ্জনক বাঁকের কারণে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি প্রশিক্ষণবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, তড়িঘড়ি করে ওভারটেক, বেপরোয়া গতি, ভাঙাচোরা সড়ক ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণেও প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় শত শত অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা উঠে যাচ্ছে মহাসড়কে। ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত এক বছরে এ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে। যদিও পুলিশের কাছে হতাহতের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। সাম্প্রতিক সময়ে এ মহাসড়কে অর্থাৎ চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজের পরের বাঁকেই নিহত হন নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিণী। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবছরও এ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে স্পিড ব্রেকার ছিলো। কিন্তু সড়ক সংস্কার করার সময় সেটা তোলে নেয়। বিপজ্জনক বাঁকে স্পিড ব্রেকারগুলো না বসানোর কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে কয়েকগুণ। 

এদিকে বাগিচাহাটের পার্শ্বে মন হরিমান টেকে সড়কে জরুরি ভিত্তিতে র‌্যাম্বেল স্ট্রেট নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম। এনিয়ে স্থানীয়রা বারবার অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি বলেও জানান তিনি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কটি অনেক সরু। এ ছাড়া কিছু দূর অন্তর রয়েছে বিপজ্জনক সব বাঁক বা মোড়। এছাড়া প্রশিক্ষণবিহীন চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।’

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ১৮ ফিট সড়ককে স্ট্যান্ডার দুই লেনে অর্থাৎ ৩৪ ফিট প্রশস্তে উন্নতি করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে শিকলবাহা থেকে মনসারটেক বাদামতল পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বাদামতল থেকে পটিয়া পর্যন্ত সড়কটি ৩৪ ফিট প্রশস্তে উন্নতিকরণ ও বাঁক সরলীকরণের জন্য একটি প্রস্তাব সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। পরবর্তীতে পটিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১৮ ফিট সড়ককে ৩৪ ফিট সড়ক উন্নতিকরণ ও সড়ক বাঁক সরলীকরণের প্রশস্তের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  আশা করা যায় যে, এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে সড়কে দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমে যাবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়