Cvoice24.com

ডিভোর্সি স্বামীকে গ্রেপ্তার করাতে গিয়ে প্রতারিত নারী, ভুয়া র‌্যাব সদস্য গ্রেপ্তার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২
ডিভোর্সি স্বামীকে গ্রেপ্তার করাতে গিয়ে প্রতারিত নারী, ভুয়া র‌্যাব সদস্য গ্রেপ্তার

আসল র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ভুয়া ব্যাব সদস্য মো. আমান উল্লাহ ওরফে মানিক

স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের কারণে আট বছরের দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ হয় রোকেয়ার (ছদ্মনাম)। বিচ্ছেদের পর সেই স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে গিয়ে পরিচয় হয় মো. আমান উল্লাহ ওরফে মানিক নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ওই ব্যক্তি নিজেকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। একইসঙ্গে মামলার বিষয়ে রোকেয়াকে সহযোগিতা এবং ওই ডিভোর্সি স্বামীকে গ্রেপ্তারের প্রলোভন দেখিয়ে দাবি করেন এক লাখ টাকা। ওই নারীও সরল মনে সেই ব্যক্তিকে কিছু টাকা দেন। পরে আবারও ওই ব্যক্তি টাকা দাবি করে এবং সেই টাকা না দিলে উল্টো রোকেয়াকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে র‌্যাবকে অবহিত করে রোকেয়া। পরে অভিযান চালিয়ে ওই ভুয়া র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। 

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার সদর ইউনিয়নস্থ কাজীর টিলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার মো. আমান উল্লাহ ওরফে মানিক (২৯) ওই এলাকার পশ্চিম সিংহরিয়া (দক্ষিণ ভূইয়াবাড়ি) বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে। 

র‌্যাব জানায়, স্বামী মো. ইলিয়াসের সঙ্গে পারিবারিক বিভিন্ন কলহের কারণে বনিবনা না হওয়ায় তাদের আট বছরের দাম্পত্য জীবন বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ওই দম্পতির ৬ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রাম বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তারই প্রেক্ষিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে ওই মামলার ব্যাপারে জানতে এলে মো. আমান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ভিকটেমের পরিচয় হয় এবং ওই ব্যক্তি নিজেকে একজন র‌্যাবের ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। একইসঙ্গে ওই নারী কেন আদালতে এসেছেন জিজ্ঞাসা করলে ভুক্তভোগী নারী তাকে বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলেন। এসময় আমান ওই মামলা তদন্তের সকল কাজ করে দিবে এবং আসামির নামে ওয়ারেন্ট বের করে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থাও করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ভুক্তভোগী ওইনারীও সরল মনে বিশ্বাস করে সাহায্য চাইলে ওই ব্যক্তি র‌্যাব দিয়ে মামলার তদন্ত ও তার ডিভোর্সি স্বামীকে গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। সেই মতে, ওই নারীও প্রথমে দুইটি মোবাইলে নম্বরে সর্বমোট সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা দেন। পরে ওই নারী গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে আমান উল্লাহ তাকে পুনরায় বিশ হাজার টাকা দিতে বলেন। এছাড়া বিশ হাজার টাকা দিতে রাজি না হলে মামলাটি ওই নারীর বিপক্ষে যাবে এবং উল্টো তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে ওই নারী তার আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের লোকজনের সহায়তায় র‌্যাবের কাছে অভিযোগ জানায়।

র‌্যাবও অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারি এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। পরে ওই আসামির অবস্থান শনাক্ত করে ১৩ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান চালিয়ে ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার ভুজপুর ইউনিয়নস্থ কাজীর টিলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর আসামি প্রতারণার কথা অকপটে স্বীকার করে এবং সে জ্ঞাতসারে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করার কথা জানায়। একইসঙ্গে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি এনড্রয়েড মোবাইল এবং প্রতারণামূলকভাবে অর্জিত নগদ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের চান্দগাঁও থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ১টি মামলা রয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়