Cvoice24.com

ব্রিজ আছে নেই সংযোগ সড়ক, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২৩ মার্চ ২০২৩
ব্রিজ আছে নেই সংযোগ সড়ক, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি বড়বিল নয়াহাট রাস্তা এলাকায় খালের উপর নির্মাণ করা সেতুটি কোন কাজে আসছে না এলাকাবাসীর

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কোনো কাজেই আসছে না ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে হারুয়ালছড়ির ফটিকছড়ি খালের উপর নির্মাণ করা একটি সেতু। ইউনিয়নের বড়বিল নয়াহাট রাস্তার এ ব্রিজটিতে সংযোগ সড়ক না থাকায় খালের নিচ দিয়ে চলাচল করেন দুপাড়ের কয়েক হাজারমানুষ। আর খালটিতে বর্ষায় পানি গেলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না এসব এলাকার খেটে খাওয়াদের। 

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫/১৬ অর্থ বছরে হারুয়ালছড়ি বড়বিল নয়াহাট রাস্তায় ফটিকছড়ি খালের উপর (আরসিসি বক্স কালভার্ট) ব্রিজটি প্রায় ২৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণে নির্মাণ করা হয়। তাদের দাবি- তখন খাল ছিল ২৮ ফুটের এবং নির্মাণ করা হয় ৩৬ ফুটের এ ব্রিজটি। পরে বিভিন্ন দুর্যোগে খালটি বড় হয়ে ব্রিজটি একপাশে চলে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল এফ আর কালেকশন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ব্রিজের একপাশের রাস্তা ভেঙে খালের পেটে চলে গেছে। রাস্তা থেকে দূরত্ব প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট। সাধারণ মানুষ খাল হয়েই হেঁটে যাতায়াত করছে।

স্থানীয়রা জানায়, বর্ষা মৌসুমে এ খালের পানি বেড়ে যায়। এত বেশি স্রোত থাকে নৌকা দিয়েও পারাপারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কত মানুষ যে এ খাল দিয়ে ভেসে গেছে তার কোন হিসাব নাই। ব্রিজটা নির্মাণের পরের বছর ব্রিজের উভয় পাশে ভেঙে যায়। ২-৩ বার ঠিক করা হলেও পানির তীব্র স্রোতে ছোট্ট এ ব্রিজের রাস্তার এক পাশ ভেঙে গিয়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি কমে গেলে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জানা যায়, উজানপাড়া, টিলাপাড়া, ডেবিলিখুল, পিনপিনিয়া ও ২টি চা বাগানের শ্রমিক সহ ৪-৫ হাজার মানুষ চলাচল করে এ ব্রিজটি দিয়ে। বর্ষার সময় সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া। কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। একটানা ১০ থেকে ১৫ দিন যাতায়াত বন্ধ থাকায় ওই এলাকার মানুষরা কাজ করতে পারে না। এলাকাগুলোর প্রায় সবাই শ্রমিক হওয়ায় কাজ করতে না পারায় খাবার জোগাড় করাও তখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় লবণ দিয়ে ভাত আবার চা পাতা খেয়েও দিনাতিপাত করেন তারা। 

বর্তমানে খালটির উপর ১০০ ফুট লম্বা ব্রিজ প্রয়োজন। কিন্তু হয়েছে ৩৬ ফুট। পানির স্রোতে দুই কূল ভেঙে যাওয়ায় এ ব্রিজটি কোন কাজেই আসছে না। এটি এখন সম্পূর্ণ চলাচল অযোগ্য। খালের পানি কম থাকায় শুষ্ক মৌসুমে হেঁটেই চলাচল করতে পারছে। আসছে ভরা বর্ষায় কিভাবে যাতায়াত করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই এসব এলাকার খেতে খাওয়া মানুষের।

এলাকার মন্দির সভাপতি সচিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এখানে সবাই শ্রমিক। দিনে এনে দিনে খায়। কাজ করতে না পারলে উপোস থাকি। কত মানুষ যে খাল পাড় হতে গিয়ে পানিতে ভেসে চলে গেছে তার হিসাব নেই। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলার ব্যথা উঠলে ডাক্তারের কাছে নিতে পারি না। খালের দক্ষিণ কূলে অনেক রোগী মারাও গেছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে না। এ দুঃখ দুর্দশা থেকে আমরা মুক্তি পাব কবে?

পাশের এলাকা হারুয়ালছড়ির আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এখানে সবার পরিচয় একটাই মানুষ, এখানে আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। আমি পাশের এলাকার বাসিন্দা। কিছুদিন আগে এখানে এসিল্যান্ডসহ একটা প্রোগ্রামে এসে এ ব্রিজটি দেখতে পাই। একটা ব্রিজের অভাবে এই এলাকার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার, সব দিকেই উন্নয়ন হচ্ছে। আমি সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রাখব এ ব্রিজটি সংস্কার করে দেয়া হোক।

স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মো. ইছমাইল বলেন- আমি দুই বারের মেম্বার হয়েও এ খালের উপর ব্রিজটা বড় আকারের না হওয়ায় আমি লজ্জিত। এখানে একটা ১০০ ফুট ব্রিজের প্রয়োজন কিন্তু হয়েছে ৩৬ ফুটের একটি ব্রিজ। এ খালে অতিরিক্ত স্রোত এবং বড়। ব্রিজটা নির্মাণের পর পানির প্রথম বর্ষার ঢলেই (পানির স্রোত) ব্রিজের রাস্তার সাইট ভেঙে গেছে। উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আমি অনুরোধ করবো, যে ব্রিজটা আছে তার সাথে আরও ৫০ ফুটের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত যেন সহজ করে দেয়া হয়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা পিআইও আবুল হোসেন বলেন, ব্রিজটি যখন হয়েছে তখন আমি ছিলাম না। এ ব্রিজের ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। এটার কিভাবে সমাধান করা যায় তার জন্য চেষ্টা করবো । ব্রিজটি ভিজিট করে বিস্তারিত বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি। 

একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানিকে জানালে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়