Cvoice24.com

বজ্রসহ বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদার মা মাছ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৭ মে ২০২২
বজ্রসহ বৃষ্টির অপেক্ষায় হালদার মা মাছ

বৃষ্টির দেখা পেলে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়বে

দেশের কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যেকোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েক দিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময়ে মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। এপ্রিলের শেষ সময়ে বৃষ্টির দেখা মিললেও হালদায় ডিম ছাড়ার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা পায়নি মা মাছ। এরমধ্যে ডিম ছাড়ার একটা জোও চলে গেছে। তবে চলতি মাসের পরবর্তী জোতে মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে আশা করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, ডিম ছাড়ার জন্য উপযোগী অবস্থায় রয়েছে হালদার পানি। এখন কেবল অপেক্ষা লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের। 

গবেষকদের ধারণা, এ বছর প্রজনন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নদী পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যতা বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ) মা মাছের ডিম ছাড়ার নজির তৈরি হতে পারে। 

ডিম ছাড়ার জন্য উপযোগী হালদা নদীর পানি, বাড়তে পারে ডিম সংগ্রহ— বলছে গবেষণা

যদিও গতবার হালদা নদীর পানির গুণগতমান ভালো থাকার পরেও অনাবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মাছের ডিম প্রত্যাশিত পরিমাণে সংগ্রহ করা যায়নি। এবছরও যদি আবহাওয়া অনূকুলে না থাকে তবে ডিম সংগ্রহে ভাটা পড়তে পারে। 

হালদার গড়দুয়ারা অংশে অংকুর ঘোনা এলাকার ডিমসংগ্রহকারী সনজিত বড়ুয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করার জন্য আমরা পুরো প্রস্তুত আছি। এখন কেবল টানা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা। সেদিন (৫ মে) ভোররাতে সেভাবে বজ্রপাত শুরু হয়েছিল ভেবেছিলাম মা মাছ ডিম ছাড়বে। আমরা গিয়েছিলামও। কিন্তু সে অর্থে আসলে বৃষ্টি হয়নি। এরমধ্যে ডিম ছাড়ার জন্য যে জো টা ছিল সেটা চলে গেছে। আমরা এরপরের জো এর জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি ভালো বৃষ্টি হলে এবার ভালো ডিম পাওয়া যাবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত একটা জো ছিল সেটা চলে গেছে। বৃষ্টিও হয়েছে কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। তাই পরবর্তী জোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে আশা করা যায় মা মাছ ডিম ছাড়বে। এখন ফুল মুনের একটা জো আছে সেটা ১২ মে থেকে ১৮ মে। এই জোতে যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় তবে আশা করা যায়। যদি এটাতেও না হয় তবে ২৫ মে থেকে ৩১ মে। আশা করি এই দুই জোতেই হয়ে যাবে।’

হালদার দূষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হালদা এখনো পুরোপুরি দূষণমুক্ত হয়নি। এখন সবচেয়ে বড় বাধা অন্যন্যা আবাসিক এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেম। এই সংযোগটা যতদিন না বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে ততদিন হালদা পুরো দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবেনা। আমরা এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার করে বলেছি কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই পদক্ষেপ কার্যকরী হয়নি।’

হালদা নদীর পানির গুণগতমাণ নিয়ে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘হালদা নদীর নাজিরহাট পয়েন্ট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ১৩টি পয়েন্টের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ১৬টি প্যারামিটারে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলী পরীক্ষা করেছি। মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য হালদার ওয়াটার কোয়ালিটি বর্তমানে উপযুক্ত অবস্থায় আছে। এটার সাথে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হতে হবে। দুই থেকে তিনদিন টানা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে তবেই মা মাছ ডিম ছাড়বে। গত দুইদিন কিন্তু বৃষ্টিও হয়েছে আবার বজ্রপাতও হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়নি। এপ্রিলের শেষদিকে বৃষ্টি হবার কথা ছিল কিন্তু বৃষ্টি হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। তাই সামনের ১৩ মে থেকে ১৯ মে, ২৮ মে থেকে ৩১ মে, আবার ১ জুন থেকে ৩ জুন, ১২ জুন থেকে ১৮ জুন, এবং ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই সময়গুলির মধ্যে মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনদিন না হলেও একদিনও যদি ভালো মতন বজ্রসহ ভারি বৃষ্টি হয় যা পাহাড়ি ঢল নেমে আনবে। ফলে পানির ঘূর্ণন সৃষ্টি করবে। তখনই মা মাছ ডিম ছাড়বে। মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য কিন্তু ইতিমধ্যে একটা জো চলে গেছে। সারাদেশে কিন্তু বৃষ্টি আরো আগে থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের এখানে কিন্তু ঠিক সেভাবে বৃষ্টিপাত এখনো হয়নি। যদিও হালকা বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু পানিতে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়নি। আমরা আরো ৫টা জো দেখতে পাচ্ছি। এরমধ্যে পর্যাপ্ত বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারবে। তাছাড়া বর্তমানে ওয়াটার বডির গুণগতমান খুবই ভালো অবস্থানে আছে। তাই আশা করছি এবছর আশানুরুপ ডিম পাওয়া যাবে। তবে সবকিছু আবহাওয়ার ওপরে নির্ভর করছে।’

প্রসঙ্গত, হালদা নদী থেকে গত বছর (২০২১ সালে) ৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০২০ সালে প্রায় ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় ১০ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি, ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি ও ২০০৯ সালে ১৩ হাজার ২০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়