Cvoice24.com

ব্যবসার ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা লোপাট, সাত বছর পর র‌্যাবের জালে ধরা হাটহাজারীর মেজবাহ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ব্যবসার ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা লোপাট, সাত বছর পর র‌্যাবের জালে ধরা হাটহাজারীর মেজবাহ

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী

২০১৫ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে শত কোটি টাকার একটি পুরনো জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল। এই পুরনো জাহাজ খুলে দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর কপাল। সমুদ্রের উপকূলে এমন আরও কয়েকটি জাহাজ কয়েক মাসের মধ্যে আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে প্রস্তাব দেয় অংশীদারিত্ব ব্যবসার। এভাবে অংশীদারিত্ব ব্যবসার ফাঁদে ফেলে অনেকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ও ব্যবসায় আগ্রহী করতে ওই প্রতারক মাসিক বেতনে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল। তাদের কাজ ছিলো ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিনের ব্যবসার সুনাম ও  সাফাই গাওয়া। 

এখানেই শেষ নয়, বাজেয়াপ্ত একটি কনটেইনারের ভেতরে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ পেয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মনযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু এসব টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করেছে বলে ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করে। এছাড়া দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাওয়া পাঁচটি ডায়মন্ড বিক্রির টাকা ফেরতে পেতে বিভিন্ন মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিতে হবে বলেও গুঞ্জন ছড়ায়। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন করাতে মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের কণ্ঠ নকল করে মোবাইলের রের্কডও বানিয়ে শুনিয়েছে ওই প্রতারক।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে তার এই ‘প্রতারণা ব্যবসায়’ ইতি টেনে দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ সংলগ্ন আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সংস্থাটি। মেজবাহ হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট ইউনিয়নের আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে। 

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নূরুল আবছার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তার অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। 

র‌্যাব জানায়, ২০১৫ সালে পুরনো জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির কথা বলে ভুক্তভোগী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ, মো. রেজওয়ান থেকে ৪০ লাখ, ইব্রাহীম থেকে ২০ লাখ, মো. রুমনের কাছ ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ, জাহিদুল ইসলাম, আসাদ ও  বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।  এমনকি অন্যের জমি নিজের নামে দাবি করে সেই জমি অনেকের কাছে বিক্রি করে আসছিল। 

র‌্যাব আরও জানায়, প্রতারণার পর ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে নিজ এলাকায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো। এছাড়া যোগাযোগ এড়ানোর জন্য ঘনঘন মোবাইল ও সিম বদল করতো। বর্তমানে আইনশৃঙ্লা বাহিনীর চোখ এড়ানোর কৌশল হিসেবে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেছে।

র‌্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নূরুল আবছার জানান, গ্রেপ্তার মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হাটহাজারী ও কোতোয়ালী থানায় বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। 

সিভয়েস/আরকে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়