নিজ খামারেই একমাস মাটিচাপা ছিলেন নিখোঁজ জাপা নেতা
লোহাগাড়া প্রতিনিধি
দীর্ঘ একমাস পর আনোয়ার হোসেনের অর্ধগলিত মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার নিখোঁজ জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেনের সন্ধান মিললো দীর্ঘ এক মাস পর। ছিলেন নিজ খামারেই! ততদিনে অবশ্য সব শেষ। মাটির সঙ্গে মিশতে শুরু করেছিল তার দেহ। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় মাটিচাপা থাকা অর্ধগলিত মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের আহমদ সওদাগরের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪২)। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন এই ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়িক কাজে গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে লোহাগাড়ার দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় নিজস্ব খামারে যান আনোয়ার। তবে রাত ৮টার দিকে বটতলী ফোরকান টাওয়ারের বাসায় ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন। সেই থেকে বন্ধ পাওয়া যায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও।
পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সকালে আনোয়ার হোসেনের ছোটভাই মো. সেলিম লোহাগাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ। কিন্তু কোনো কিছুতেই কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না।
হঠাৎ একদিন আনোয়ারের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে ভাই সেলিমের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বনিবনা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলেও তারা ফোনের উৎস খোঁজে পায়নি।
আবার ২ জানুয়ারি সকালে কুমিল্লা থেকে ফোন করে এক ব্যক্তি সেলিমকে জানান তার ভাইকে পাওয়া গেছে। কিন্তু গাড়ি ঠিক করে কুমিল্লা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে নিতেই ওই মুঠোফোনটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এভাবে বারবার একই ধরনের ঘটনা আনোয়ার হোসেনের পরিণতি নিয়ে তার পরিবারকে সঙ্কিত করে তুলে। তাই গত ২১ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন আনোয়ারের স্ত্রী নার্গিস আক্তার। এবার কোমর বেঁধে মাঠে নামে পুলিশের চৌকস দল। বিভিন্ন সোর্স ও প্রযুক্তির মাধ্যমে চলে নিখোঁজ আনোয়ারকে উদ্ধারের চেষ্টা।
এর মধ্যে আটক করা হয় আনোয়ারের দুই কর্মচারী স্থানীয় আসিফ ও মিয়ানমার নাগরিক আনছারকে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, আনোয়ারকে তার দুই কর্মচারীই হত্যার পর খামারে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দীর্ঘ এক মাস পর দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় সেই খামার থেকে মাটিচাপা অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবীব জিতু, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, ওসি জাকের হোসাইন মাহমুদ, ওসি তদন্ত রাশেদুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।