Cvoice24.com

কার টাকায় কেনা গরু, চলছে রশি টানাটানি

মিরসরাই প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৫ এপ্রিল ২০২১
কার টাকায় কেনা গরু, চলছে রশি টানাটানি

মিরসরাই প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মো. শাহীন ও উপাধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন

মিরসরাইয়ে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন দিদারুল আলম নামে এক গরু ব্যবসায়ী। অভিযোগের একদিন পর ব্যবসার উদ্দেশে আত্মীয়ের জন্য গরু কেনার পর নিজের নামে রশিদ কাটায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ওই গরু ব্যবসায়ী দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে উভয় পক্ষ পাল্টাপল্টি সংবাদ সম্মেলনও করেছে মিরসরাই প্রেসক্লাবে। এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়ে গরুর মালিকানা নিয়ে।

এদিকে ব্যবসার উদ্দেশে আত্মীয়ের জন্য গরু কেনার পর নিজের নামে রশিদ কাটায় ওই গরু ব্যবসায়ী দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে নিজেকে ভুক্তভোগী উল্লেখ করে রবিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে মিরসরাই প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মো. শাহীন ও মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. শাহীন বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহাকে উপলক্ষ্য করে ব্যবসার উদ্দেশে লালমনিরহাটের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ির হাট থেকে গরু কেনার জন্য গত ১৫ মার্চ আমার ভগ্নিপতি মফিজউদ্দিন ভাষানি থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে আমার বোনের দেবর (তালতো) দিদারুল আলমকে পাঠাই। দিদার দালালের মাধ্যমে ৬টি গরু ক্রয়ের জন্য ঠিক করে আমাকে টাকা পাঠাতে বলে। গত ১৮ মার্চ আমি ইসলামী ব্যাংকে মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব নং -৩১৪৭২ তে ১০ লাখ ১৯ হাজার ৫’শ টাকা তার কাছে পাঠাই। পরবর্তীতে আমি ব্যাংক থেকে আরও ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে সেই টাকা নিয়ে রংপুরে যাই। এসময় গত ২৩ মার্চ দিদারের সাথে রংপুরে দেখা হলে সে আমাকে জানায়, গত ২১ মার্চ ৫টি ও ২৩ মার্চ ১টিসহ মোট ৬টি গরু সে ক্রয় করেছে।’ 

শাহীন বলেন, ‘আমি দিদারের কাছে গরু ক্রয়ের রশিদ দেখতে চাইলে সে আমাকে বলে তার নিজের নামে গরু ক্রয় করেছে; যদিও রশিদে ঠিকানা আমার ভগ্নিপতির বাড়ি মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় দিয়েছে। পরের দিন গত ২৪ মার্চ ও ২৫ মার্চ তার কাছে থাকা অবশিষ্ট টাকা ও আমার কাছে থাকা টাকা একত্র করে একই দালালের মাধ্যমে আরও ১৫টি গরু কিনে গত ২৫ মার্চ সর্বমোট ২১টি গরু নিয়ে মিরসরাইয়ের উদ্দেশে রওনা হই। পরের দিন ২৬ মার্চ দুপুর প্রায় ৩টায় খইয়াছড়া ইউনিয়নের খইয়াছড়া স্কুল মাঠে গাড়ি থেকে গরু নামিয়ে আমার ভগ্নিপতি মফিজ উদ্দিন ভাষানির বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। পরে আমি আর দিদার চট্টগ্রাম শহরে চলে যাই। শহরে গিয়ে আমি দিদারের কাছে গরু ক্রয়ের রশিদ ও টাকার হিসেব চাইলে সে তাৎক্ষণিক সেখান থেকে পালিয়ে যায়।’

‘গত ১২ এপ্রিল দিদার আমার বিরুদ্ধে গরু চুরির বিষয়ে মিরসরাই থানায় একটি অভিযোগ দেয়। পরবর্তীতে মিরসরাই থানা থেকে এস আই মাকসুদ ঘটনার তদন্তে গেলে আমার ভগ্নিপতির ভাই মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন মিরসরাই থানার ওসিকে দিদারুল আলমের প্রতারণার বিষয়টি বলেন। গত ১৯ এপ্রিল থানায় সালিশি বৈঠকে দিদার ৫টি গরু কেনার কার্বন রশিদ দেখালেও টাকার উৎসের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তার দেয়া তথ্যের সঠিক উত্তর না পেয়ে পরবর্তীতে মিরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান ৬টি গরু প্রফেসর নাসির উদ্দিনের জিম্মায় দিয়ে দেন এবং দিদারুল আলমকে গরু কেনার টাকার উৎসহ দেখাতে বলেন।’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন শাহীন।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর দিদার থানায় তার টাকার উৎসের কোন প্রমাণ না দিয়ে উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে আমার নামে, থানার ওসি ও প্রফেসর নাসির উদ্দিনের নামে বিভিন্ন ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মিথ্যাচার করেছে।’ এসময় প্রতারক দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান মো. শাহীন।

এদিকে হাট থেকে গরু কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছে— অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গরু ব্যবসায়ী দিদারুল আলম। শনিবার (২৪ এপ্রিল) মিরসরাই প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

ব্যবসায়ী দিদারুল আলম অভিযোগ করেন, ‘ব্যবসার উদ্দেশে আমার নিজের টাকা দিয়ে ৬টি গরু ক্রয় করেছি। কিন্তু আমার তালতো শাহিন ও প্রফেসর নাসির উদ্দিন অবৈধভাবে ও রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে আমার গরুগুলো আটকে রাখেন। এ ঘটনায় আমি মিরসরাই থানায় অভিযোগ করেছি। পরবর্তীতে শালিসি বৈঠকে মিরসরাই থানার ওসি গরু ক্রয়ের রশিদগুলো রেখে দেন এবং আমার আনিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় বলে আমাকে জানায়। পরে এসআই মাকসুদের সাথে যোগাযোগ করে গরুগুলো নিয়ে যেতে বলেন ওসি।’

‘দুই দিন পর আবার যোগাযোগ করলে ওসি সাহেব বলেন— ‘কি গরু, কিসের গরু। আপনি নাসির সাহেবের সাথে সমঝোতা করেন।’ নাসির সাহেবে কাছে গেলে তিনি আমাকে হুমকি ধমকি দেন।’— অভিযোগ ব্যবসায়ী দিদারুল আলমের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়