Cvoice24.com

সেদিনের পর আর কখনো গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেননি মফিজ

মিরসরাই প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১১ জুলাই ২০২১
সেদিনের পর আর কখনো গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেননি মফিজ

১১ জুলাই রবিবার। মিরসরাইয়ের ইতিহাসে ভয়াবহ একটি দিন। উপজেলা সদর থেকে খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৪৪ স্কুলছাত্র। ওই দুর্ঘটনার পর একে একে পেরিয়ে গেছে নয়টি বছর। সেই দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন সহপাঠী, কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ হারিয়েছেন প্রিয় ছাত্র। সেই শোক আজও কাঁদায় তাদের। 

সেদিন এই ৪৪ স্কুলছাত্রকে নিজের গাড়িতে করে ফিরছিলেন পিকআপ চালক মো. মফিজ। এই দুর্ঘটনার দায়ে টানা ৫ বছর সাজা খেটেছেন তিনি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কিছুদিন সামাজিক কারণে আত্মগোপনে ছিলেন মফিজ। এখন ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। সেদিনের ক্ষত তাকেও কাঁদায় আজো। ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই জেল থেকে বেরিয়ে আর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেন নি মফিজ। রোগশোকে ভুগে প্রবাসে থাকা দুই ছেলের আয়েই ভর করে চলেন তিনি।

মিরসরাই ট্র্যাজেডির এই দিনে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় তার সঙ্গে। সেদিনের কথা বলতেই তিনি বলেন, ওই পিকআপে আমার ভাইয়ের ছেলেও ছিলো। সন্তানহারা বাবাদের মতো আমিও একজন। আমারও কষ্ট হয়। এতোগুলো সন্তান মূহুর্তে চলে যাওয়া সেদিনের কথা আমি এখনও ভুলতে পারছিনা। এখন আর গাড়ি চালাই না। প্রবাসী দুই ছেলের টাকায় জীবন চলে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর অনেকে হুমকি ধমকি দিতো। কটু চোখে দেখতো। তবে বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি।

সেদিনের দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ চায়না কাউকে ইচ্ছে করে মারতে বা এক্সিডেন্ট করতে। সড়কটি ছিলো একেবারে সরু, সড়কের পাশে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি ওই গাড়ি ক্রস করছিলাম। একপর্যায়ে বা-পাশের একটি চাকা সড়কের বাইরে চলে গেলে আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

চলন্ত অবস্থায় ফোনে কথা বলা আর গাড়ির হেলপার হয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যে অভিযোগ। আমার কথা কেউ শুনেনি। হেলপার নয় আমি ওই গাড়ি আমি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিলাম।

সেদিনের ঘটনায় প্রাণ হারানো স্কুলছাত্র আশরাফ উদ্দিনের বাবা নিজাম উদ্দীন। চালক মফিজকে নিয়ে তার আর কোন ক্ষোভ নেই। তার ক্ষোভ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর খেলা পরিচলানাকারীদের উপর। 

তিনি বলেন, ড্রাইভারের দায়িত্বে ছেলেগুলো ওখানে যায়নি। দায়িত্বশীলরা দায়িত্বে অবহেলার কারণে এতোগুলো ছেলের প্রাণ গেল। শিক্ষক কিংবা খেলা পরিচালকরা ওই সময় স্কুলছাত্রদের নিজ দায়িত্বে বাড়ি পৌঁছে দিলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। 

তিনি আরও বলেন, এই দিন আসলে আমাদেরকে আবারও নতুন করে স্বরণ করিয়ে দেয়। সন্তানহারানো বেদনা একমাত্র তার পিতার কাছে অনুভব হয়। ফুল, শ্রদ্ধা আর আলোচনায় শেষ হয় এদিবস। অথচ অনেক পরিবার এখনও অনাহারে দিন পার করছেন। অনেক অভিভাবক দিনমজুর। একদিন কাজ না করলে তাদের চুলোয় আগুন জ্বলে না। দিবসটি উপলক্ষে তাদের একটা দিনের জন্য হলেও সম্মানির দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়