Cvoice24.com

মিরসরাইয়ে ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
মিরসরাইয়ে ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

গ্রেপ্তার মামুন ও তার দুই সহযোগী মুকেশ চন্দ্র দাস ও মো. ইকবাল

প্রতিদিনের মতো গত ১৯ সেপ্টেম্বর মো. শহিদুল ইসলাম আকাশ ও তার বাবা তাদের পরিচালিত ফার্নিচারের দোকানে যায়। নিজ ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে সেখানে আগে থেকেই ওঁৎপেতে বসেছিল আসামি মো. মামুন ও তারা সহযোগীরা।

অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে শহীদুলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে শহিদুল এর প্রতিবাদ জানালে আসামি মামুন তাকে টেনে দোকানের বাইরে নিয়ে যায় এবং কিরিচ দিয়ে মাথার পিছনে গভীরভাবে জখম করে। একপর্যায়ে যুবলীগ কর্মী শহিদুলকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে মো. মামুন ও তার সহযোগীরা। রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে প্রথমে নগরের পাহাড়তলীর সিডিএ মার্কেট এলাকা থেকে মূল আসামি মো. মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাত ৮টায় তার দুই সহযোগীকে চাঁদপুর জেলার পুরান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলো— মূল আসামি মো. মামুন (২৫) ও তার দুই সহযোগী মুকেশ চন্দ্র দাস ওরফে সৌরভ দাস (২৪) ও মো. ইকবাল (২২)।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকায় ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. মামুনের ছোট ভাই আফজাল হোসেনকে দুস্কৃতিকারীরা কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময়ে মামুন এবং তার অপর এক ভাই ইকবাল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় জেল হাজতে ছিল। তাদের মধ্যে পূর্ব থেকে পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। পরে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পায় মামুন। মুক্তি পেয়ে মামুন তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার সহযোগী মোতালেব, রাজু, নেজাম, হামিদ ও মুকেশসহ পরিকল্পনা করে। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, জামিনে মুক্তি পাওয়ার ৫ দিনের মাথায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর যুবলীগ কর্মী মো. শহিদুল ইসলাম আকাশকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। নিহত শহিদুল এবং তার বাবা প্রতিদিনের মতো তাদের ফার্ণিচারের দোকানে যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় মো. মামুন এবং তার সহযোগীরা বিভিন্ন অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দোকানে গিয়ে শহিদুল ইসলামকে গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে শহিদুল ইসলাম এর প্রতিবাদ জানালে আসামি মো. মামুন তাকে টেনে দোকানের বাইরে নিয়ে যায় এবং কিরিচ দিয়ে মাথার পিছনে গভীর জখম করে আহত করে।

এম এ ইউসুফ বলেন, আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শহিদুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামি মো. মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দিয়ে শহিদুলকে গলায় এবং থুতনীতে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে শহিদুলের পিতা তার ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে আসামি মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং দোকানের সামনে রাস্তার উপর তার বুকের উপর বসে হুমকি দেয়। যদি সে বেশি নড়াচড়া করে তবে তাকেও জবাই করে দিবে। এরপর আসামিরা তাদের হাতে থাকা ছুরি, কিরিচ এবং বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহিদুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে আসামিরা গুরুতর আহত অবস্থায় শহিদুলকে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, শহিদুল ইসলাম ওরফে আকাশকে হত্যার পর পরই আসামিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে মূল আসামি মো. মামুন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে, গত ২১ সেপ্টেম্বর নিহত শহিদুলের বোন বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়