Cvoice24.com


কালুরঘাট সেতু : জীবন সায়াহ্নে এসেও চলছে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ১৪ জুলাই ২০২০
কালুরঘাট সেতু : জীবন সায়াহ্নে এসেও চলছে চিকিৎসা

প্রায় ৯০ বছরের পুরানো কালুরঘাট সেতুতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত, ভেঙে গেছে পাটাতন, কোথাও কোথাও উঠে গেছে রেল লাইনের স্লিপার। একটু ভারী গাড়ি চললেই থর থর করে কাঁপছে। বাধর্ক্যজনিত এসব সমস্যা সমাধানে দফায়-দফায় চলছে এই সেতুর সংস্কার কাজ। তবু একেক বার এক এক দিকে ছিঁড়ে ফেটে যাচ্ছে। যেন শেষ বয়সে এসে বেড়েছে চিকিৎসা খরচ!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর এবার সহ মোট ৩ বার এই সেতুর ছোটখাটো সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এবার সম্ভাব্য সংস্কার ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এবারে এই সেতুর মেরামত করা হবে প্লেট, চেক রিল, কার্পেটিং, পাটাতন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বার বার এই সেতুর সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করার ফলে দ্রুত সময়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব স্লিপার, পাতাটন। সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত। একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু অন্য দিকে কোন নির্দেশনা না মেনে এই সেতুর উপর দিয়ে চড়ছে 'ওভার লোডের' যানবাহন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  জোড়াতালি দিয়ে এই সেতু থেকে আর বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব নয়, তাই প্র‍য়োজন একটি নতুন সেতু।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান,  এখানে প্র‍য়োজন নতুন একটি সেতু। তবে একই সেতুকে রেল ও সড়ক সেতু হিসেবে ব্যবহার করতে চাওয়ার কারণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নতুন সেতু তৈরি করতে। 

কোরবানির ঠিক আগ মুহুর্তে শুরু হয়েছে সেতুর সংস্কার কাজ। এমন পরিস্তিতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হবে ওই ব্রিজের উপর নির্ভরশীল দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষের। এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ এককভাবে এই সেতু নিয়ন্ত্রণ করে না। সেই সাথে এই সেতুর সংস্কার কাজ আর ২ থেকে ৩ মাস দেরিতে করা হলে এর সংস্কার ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যেত। তাছাড়া জনভোগান্তির কথাটি মাথায় রেখে শুধুমাত্র রাতে সড়ক বন্ধ থাকছে।


শেষ সায়াহ্নে শুধু বাড়ছে সংস্কার ব্যয়: 

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী অংশে প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানার ভারী যানবাহন এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর রেলওয়ে সেতুটিকে ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষক এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ  হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোন নির্দেশনা না মেনে চলছে এসব ভারী যান। 

এত চাপ আর সইতে না পারে যেন বার বার মুচড়ে পড়ছে সেতু! প্রায় প্রতি বছরই কোন না কোন সংস্কার কাজ করতে হচ্ছে এই সেতুর উপর দিয়ে। যা সেতুর উপর নির্ভশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য ডেকে আনছে মারাত্মক ভোগান্তি। সেই সাথে রেলওয়ের ব্যয় হচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। এ সেতু বড় ধরনের সংস্কার কাজ হয় ২০০৪ সালে। সেইবার ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা।  এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর ২০১২ সালেও আরও একবার সংস্কার কাজ হয়।

পরে জাহাজের ধাক্কায় একটি স্প্যান সরে যায়। ওই সময় দুদিন বন্ধ রেখে তা ৫০ লাখ টাকায় মেরামত করা হয়। এর আগে একাধিক দফায় সেতুর সংস্কার করা হয়। 

অন্যদিকে সম্প্রতি সময়ের মধ্যে মাস দুয়েক আগেও এই সেতুর উপর দিয়ে রেল লাইনের সংস্কার কাজ করা হয়েছে। আর চলমান সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, এর আগে সংস্কার কাজের জন্য সোমবার (১৩ জুলাই) থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) জরাজীর্ণ  কালুরঘাট ব্রিজে মোট ১১ দিন রাতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনে ট্রেনসহ অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সংস্কার কাজ শেষে সেতুটি আবার আগের নিয়মে খুলে দেওয়া হবে।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়