Cvoice24.com


রেলের জমিতে হাসপাতাল বানাতে পদে পদে বাধা

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০
রেলের জমিতে হাসপাতাল বানাতে পদে পদে বাধা

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি এলাকায় রেলের পরিত্যক্ত জমিতে হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে রেলওয়ে শ্রমিকলীগ, সিবিএসহ বিভিন্ন সংগঠন। কেননা রেলের বরাদ্দকৃত ঘরগুলোর বাইরেও সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ঘর ভাড়া দিয়ে বাণিজ্য করছেন অনেকেই। তাদের উচ্ছেদ করতে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর অভিযানে নামছে কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত জায়গায় থাকা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি আশ্রম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের স্থাপনার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত এলাকার মুখেই প্রকল্পের তথ্য বিবরণী সংবলিত বড় বিলবোর্ড টানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকলীগ এবং অন্য সংগঠনের ব্যানারেও টানানো হয়েছে সাইনবোর্ড। আর বিলবোর্ড লাগোয়া মাঠের শেষ প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে রিকশার গ্যারেজ। অন্যদিকে প্রবেশমুখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এর পেছনেই শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ নিতাই গৌর বন্ধুকুঞ্জ আশ্রম।  

জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) হচ্ছে ৫০০ শয্যার অত্যাধুনিক এই হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ। কার্যনির্বাহী সংস্থার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড। এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৮ মার্চ একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় তাদের মধ্যে। এরপরই রেলওয়ের ওই স্থানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় নতুন বাসা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পরেও ঘরে ছেড়ে যাননি অনেকেই। 

বরাদ্দপ্রাপ্তরা অবশ্য বলছেন, রেলওয়ে কলোনির বরাদ্দ বাতিল করে এখানকার বসবাসরতদের নতুন করে যেখানে স্থান দেওয়া হয়েছে তা বসবাসের অনুপোযগী। রেলওয়ে হাসপাতাল শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তিনটি ঘর এরই মধ্যে ছাড়া হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে খালি করে দেওয়া হবে।’ 

বরাদ্দ পাওয়া বাসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নতুন যে বাসাগুলো আমাদের দেওয়া হয়েছে সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয়। বর্ষাকালজুড়েই পানি থাকে। সঙ্গে নানা সমস্যা তো রয়েছেই। তাই আমাদের বসবাস উপযোগী বাসা বরাদ্দ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তালিকা অনুযায়ী সেখানে ঘর বরাদ্দ আছে কেবল আটটি পরিবারের জন্য। কিন্তু তাদের বাইরেও অবৈধভাবে বসবাস করছে ৫০টির বেশি পরিবার। তাই অভিযোগকে ভিত্তহীন দাবি করে প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান ইঞ্জিনিয়ার (সেতু) আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেন, ‘ওই স্থানে আমাদের তালিকায় আটটি পরিবার আছে। অথচ তাদের বিপরীতে ঘর খালি ১৯৫টি। মূলত রেলের জায়গায় তারা অবৈধ ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। তাই বাসা বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করছে।’

হাসপাতালের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক আহসান জাবির বলেন, ‘বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রথম ধাপে ২ দশমিক ৪২ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে বুঝিয়ে দেওয়া হবে ৩ দশমিক ৫৮ একর। রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনিতে যারা বরাদ্দপ্রাপ্ত রয়েছেন এরই মধ্যে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। এর মধ্যে না সরলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’ 

এদিকে বিভিন্ন সংগঠনের চাপের মুখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আশ্রমটি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রেলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম সিভয়েসকে বলেন, ‘এ দুটি স্থাপনা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা স্থাপনা সংশ্লিষ্টদের বলেছি— জিএম স্যারের সঙ্গে কথা বলে তারা যেন একটি সিদ্ধান্তে আসে। প্রয়োজনে নীতিমালা অনুযায়ী অন্যত্র বরাদ্দের অনুমতি চাইতে পারে।’

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যকারী সভাপতি শেখ লোকমান হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘আগের জিএম (সরদার শাহাদাত আলী) মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। উনি বলে গেছেন, আমাদের যেহেতু কাগজপত্র ঠিক আছে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দিবেন।’

সিভয়েস/এপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়