Cvoice24.com


‘ভাঙা ঘর’ থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘চারুলতা’র আলো

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ জানুয়ারি ২০২১
‘ভাঙা ঘর’ থেকে ছড়িয়ে পড়া ‘চারুলতা’র আলো

ছবি : সিভয়েস

চারদিকে সংক্রমণের শঙ্কা। দিশেহারা মানুষ। কেউ করোনার চপেটাঘাতে চাকরি হারিয়ে হেঁটেছেন বাড়ির পথে। মহামারী কেড়েছে শিক্ষা, চিকিৎসা, আনন্দ—এমনকি উৎসবের অধিকারটুকু। সব কেড়ে নিয়ে বাড়িয়েছে শ্বাসকষ্টের করুণ মৃত্যু। 

করোনার ঢামাডোলে গেল বছরের পুরোটাই যখন এমন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা চট্টগ্রামজুড়ে। ঠিক এমন সময়ে নগরের পথ থেকে পাহাড়ি রাস্তায় কিংবা দুর্গম প্রান্তরের দুয়ারে দুয়ারে ছুটেছে সামাজিক সংগঠন ‘চারুলতা’। করোনার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। হাজারো মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে খাদ্যসামগ্রী। রোজা ও কোরবানির ঈদে শিশুদের আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করেছে নতুন নতুন পন্থায়।

করোনার ক্রান্তিকাল গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সংগঠনটি গড়ে তুলে ‘চারুলতা টেলিমেডিসিন সেবা’। সেখানে ফোন করে চিকিৎসা নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ভাইরাসের বাড়-বাড়ন্ত সময়ে সেই দূরআলাপনী চিকিৎসা জুগিয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় খামারিদের পোষা পশুপাখিরও। এদের চিকিৎসা দিয়েছে ‘চারুলতা ভেট-টেলিমেডিসিন’ মেডিকেল টিম।

চারুলতার সভাপতি মোমেনা খাতুন পুষ্প সিভয়েসেকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে যেন বাইরে যেতে না হয় তাই এই টেলিমেডিসিন টিম গড়ে তোলা। এই টিমে রয়েছেন মেডিসিন সার্জারি ও গাইনিসহ ছয় চিকিৎসক। আর খামারিদের পোষা পশুপাখির চিকিৎসা দিতে ভেট-টেলিমেডিসিন টিমে রয়েছেন পোল্ট্রি, পেট, নিউট্রিশন বিভাগের ১৩ চিকিৎসক।’ একই ধারাবাহিকতায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের উঁকিঝুঁকি দেখে আবারও নৃশংস করোনাকে মোকবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি —এমনটাই জানালেন পুষ্প।

নগরীর ষোলশহর তুলাতুলি এলাকায় গড়ে উঠেছে ‘চারুলতা বিদ্যাপীঠ’। বেতন ছাড়াই সেখানে পড়ালেখা করে দেড়শরও বেশি শিক্ষার্থী। তবে চারুলতা বিদ্যাপীঠ শুরু হয়েছিল একটা ভাঙা ঘরে। তাও ভাড়ায় নিয়ে। এরপর প্রতি বছর একটা করে ক্লাস বাড়তে থাকে, সঙ্গে বাড়ে রুমের চাহিদা। থেমে থাকে না খরচের হাতটাও। তারা শিক্ষার্থীদের বই, খাতা-কলম থেকে শুরু করে ঈদের পোশাকেরও দায়িত্ব নিয়েছে। আর করোনাকালে হতদরিদ্রের খাবার-চিকিৎসার। 

সংগঠন সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্চ থেকে শুরু হয় চারুলতার নানা কর্মযজ্ঞ। লকডাউন চলাকালীন ২৬ মার্চ প্রথমবারের মত ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ দিনমজুর পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। ১০ এপ্রিল চালু হয় চারুলতার টেলিমেডিসিন সেবা। 

এপ্রিলের শেষ দিকে নগরী মাড়িয়ে চারুলতার পা পড়ে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে। একযোগে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও বান্দরবানের ওই এলাকায় কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে সংগঠনটি। ৯ ধাপে আরও কয়েকশতাধিক সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় বিভিন্ন স্থানে। 

সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের পাশাপাশি করোনাকালে শিশুদের জন্যও নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে ১৭ মে হাটহাজারীতে অবস্থিত ‘বাসুদেব’ অনাথ আশ্রমে ২০০ শিশুর জন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে চারুলতা। তাছাড়া গরু কোরবানি দিয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা উদযাপন করে পবিত্র ঈদুল আজহা। 

সংগঠনটির স্কুল কমিটির সভাপতি দ্বীপাঞ্জল রক্ষিত সিভয়েসকে বলেন, ‘নগরীজুড়ে অনেক শিশু আছে। যাদের মেধা আছে কিন্তু এরা সেই পরিবেশটুকু পায় না। আবার কেউ কেউ পড়াশোনার ফাঁকে অন্য কাজও করে। তারাও পড়ালেখা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও যে এরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেটাই বড় বিষয়। আর আমরা এই আলোদের সহযাত্রী হতেই চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।’ 

-সিভেয়স/এপি

আসিফ পিনন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়