Cvoice24.com

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ শ্রমিক নিহতের কারণ জানতে পুলিশের তিন সদস্যের কমিটি 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ১৭ এপ্রিল ২০২১
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ শ্রমিক নিহতের কারণ জানতে পুলিশের তিন সদস্যের কমিটি 

বাঁশখালীতে এস আলমের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভকালে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির করা এ তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। 

শনিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ তদন্ত কমিটি করেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাশেন ও ক্রাইম) জাকির হোসেন খানকে প্রধান করে রেঞ্জ অফিসের পুলিশ সুপার নেছার উদ্দীন ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত এসপি কবির হোসনকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাচ্ছি। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আসল ঘটনা জানা যাবে।’

এদিকে শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে বাঁশখালীর ঘটনায়‌‌ ৪ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার বলেন, কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পুলিশের একজন, কলকারখানা অধিদফতর থেকে একজন এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একজনসহ মোট চারজন সদস্য থাকবেন। 

এছাড়া পাশাপাশি ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে নিহতের পরিবারকে কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা করে ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। 

এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ডাকে বিদ্যুৎ নির্মাণ কর্তৃপক্ষ। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে চলমান আন্দোলন বেলা পৌণে ১২টার দিকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জোর করে দমাতে যায়। এরপরই শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশও তাদের ওপর গুলি চালায় এতে ঘটনাস্থলেই চারজন ও চমেক হাসপাতালে একজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত আরও ১৭ জন। এছাড়া আহত হয় তিন পুলিশ সদস্যও। 

চমেক হাসপাতালে সাইদুল আসলাম হৃদয়, মোহাম্মদ আশিক ও মোহাম্মদ আরিফসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক সিভয়েসকে জানিয়েছেন তাদের ১২ দফা দাবিগুলো। তা হলো, ১. ১০ তারিখ বেতন দিতে হবে। ২. পানি ও বাথরুম ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। ৩. রমজান মাসে ৮ ঘন্টা করে ডিউটি করাতে হবে, কেননা ১০ ঘণ্টা ডিউটি করলে ইফতারের সময় পাওয়া যায়না। ৪. শুক্রবার অর্ধ কর্ম দিবস দিতে হবে, জুমার নামাজ পড়া ও বিশ্রামের সুযোগের জন্য। ৫. ঈদের বোনাস ৫০ % দিতে হবে। ৬. কোন শ্রমিক কাটিংয়ের (ছাঁটায়ের) ১ মাস আগে বলতে হবে এবং ছাঁটাইয়ের পর তার পাওনা বেতন দিতে হবে। যখন তখন হুট করেই ছাঁটাই করা যাবে না। ৭. অগ্নিকাণ্ডে কোন শ্রমিকের ক্ষতি হলে সম্পূর্ণ খরচ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। ৮. স্কেল অনুসারে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। ৯. ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও শ্রমিকরা বীমা ভাতা পাননা। তাই ইন্সুরেন্স সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ১০. কোন চাইনিজ বাঙ্গালি শ্রমিকদের গায়ে হাত দিতে পারবে না। ১১. সকাল ৭ টা থেকে ডিউটি দিতে হবে এবং ১২. সকল দাবি পূরণ হলে ডিউটিতে যোগ দেওয়া।   

বেসরকারি খাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান।  এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানায় আছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে চীনের সেপকো থ্রি ২০ শতাংশ এবং চীনের অপর প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশ। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬০ পয়সার মতো।  

এস আলম সহ চীন দুই প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পের মালিক হলেও নির্মাণাধীন প্রকল্পে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে মূলত বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো, মাহি এন্টারপ্রাইজ, এনআরএম এন্টারপ্রাইজ, রকিব এন্টারপ্রাইজ, আলী এন্টারপ্রাইজ, আদিবা এন্টারপ্রাইজ, ইমা এন্টারপ্রাইজ, উজ্জ্বল এন্টারপ্রাইজ। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। তবে বেশিরভাগ শ্রমিক সরবরাহ করছে মাহি এন্টারপ্রাইজ। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ থেকে ঘণ্টা প্রতি ১৩০ টাকা করে নেওয়া হলেও তাদের থেকে ১০ টাকা করে রেখে দিয়ে ১২০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। এনিয়েও ক্ষোভ ছিল আন্দোলনরত শ্রমিকদের মাঝে। 

এদিকে রাষ্ট্রীয় একটি অভ্যন্তরীণ একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় বেসরকারিভাবে নির্মানাধীন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্লান্টে ইফতার,নামাজ সূচি নির্ধারণ ও বেতন-ভাতা নিয়ে স্থানীয় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে, শ্রমিকরা পুলিশ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের উপর হামলা করলে পুলিশসদস্যরা গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ৫ জন স্থানীয় শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনায় ৩ জন পুলিশ সদস্যসহ ৩০ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়। গুরুতর আহতদের মধ্যে ৭ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দায়িত্বরত বিদেশী কর্মীগন নিরাপদে রয়েছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

গতকাল বাদ মাগরিব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইফতার, নামাজ সূচি নির্ধারণ ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত ১০ দফা দাবি দাওয়া নিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়