Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

হত্যার আলামত ধ্বংস করতেই মুসলিম স্ত্রীকে হিন্দু রীতিতে দাহ— আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২১ আগস্ট ২০২১
হত্যার আলামত ধ্বংস করতেই মুসলিম স্ত্রীকে হিন্দু রীতিতে দাহ— আদালতে স্বামীর স্বীকারোক্তি

নিজ হাতে পিটিয়ে স্ত্রীকে হত্যার পর স্ট্রোকের নাটক সাজান। ধরা খাওয়ার ভয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শে স্ত্রী মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু প্রথায় শশ্মানে নিয়ে দাহ করেন। উদ্দেশ্য একটাই হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ ধ্বংস করা। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি এনির স্বামী বাবলু দে ওরফে তনুর। এসব কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। 

শনিবার (২১ আগস্ট) চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‌‌‌‘বাবলু চান তার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে বসবাস করতে। তবে তার স্ত্রী  ইয়াছমিন আক্তার অ্যানি (২৪) শহরে বসবাস করতে চান। বিষয়টি নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ইয়াছমিনকে থাপ্পড় মারেন বাবলু। এতে ইয়াছমিন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে বাবলু একজন গ্রাম্য চিকিৎসক ডেকে আনে। তখন চিকিৎসক নিশ্চিত করেন ইয়াছমিন মারা গেছেন। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্টের কৌশল হিসেবে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজনকে অবহিত করে বাবলু তার স্ত্রীর মরদেহ হিন্দু রীতিতে পুড়ে ফেলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিজের স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেপ্তার বাবলু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।’

এর আগে, গত ১৬ আগস্ট নিহত তরুণীর মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এনির স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকারম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরীকেও আসামি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত ওই তরুণীর স্বামী বাবলু দে তনুকে (৩০) উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা বীণাপানি সংঘ পুজামণ্ডপ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন— মোহাম্মদ মোকারম (৫৬), পবন দাশ (৫৫), রতন চৌধুরী, সাধন মহাজন (৬০), নিমাই দে (৪৫), শংকর দত্ত (৩৩), অরবিন্দ মহাজন (৫০), অরুন দাশ (৫০), দিলীপ দেব (৪৫), প্রদীপ সুত্রধর (৪০), রাম প্রসাদ (৩৮), রনি দে (৩০), অরুপ মহাজন (৪২), সমর দাশ (৫৫), রবীন্দ্র ধর (৬০), নিপুন সেন (৬০) ও ইউসুফ প্রকাশ ড্রেজার ইউসুফ (৩৫) ।

জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে নিহত এনির খালাতো বোন হাসিকে স্বামী বাবুল মুঠোফোনে জানান, এনি মারা গেছেন। হাসি এনির পরিবারকে খবরটি দেন। এনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে স্বামী জানান। এনির মা লাশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দেবেন বলে জানান। কিন্তু ওই রাতেই বাবুলের ভাই পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে এনির মাকে যেতে বারণ করেন। তাকে জানানো হয়, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে লাশ সৎকার করা হয়েছে। একজন মুসলিম মেয়েকে কীভাবে সৎকার করেছেন জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শে লাশ আগুনে পুড়িয়ে সৎকার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নগরের বন্দরটিলায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় ওই এলাকার সেলুনের কর্মচারী বাবলু দে’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ইয়াছমিন আকতার এনির। তিন বছর আগে তারা পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করে। এক বছর শহরে থাকার পর গত দুই বছর ধরে তারা জ্যৈষ্ঠপুরায় চলে আসে। বাবলু মুসলিম মেয়ে বিয়ে করেছে এটা এলাকায় কেউ জানত না বলে দাবি স্থানীয়দের।

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়