Cvoice24.com

দুই প্রকল্পে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১১:০৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২১
দুই প্রকল্পে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর

ছবি: সংগৃহীত

১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রামে শুরু বিমানবন্দরের যাত্রা। ৯ বছর আগে ২০১৩ সালে মিলেছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৮১ বছর পথ পাড়ি দিয়েছে এক সময়ের ‘চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড’ হিসেবে যাত্রা শুরু করা এ বিমানবন্দরটি। টার্মিনাল ভবন, কার্গো কমপ্লেক্স, এয়ারক্রাফট পার্কিং ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক রেডার, বডি স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সাবলম্বী হয়েছে। 

এখন ‘রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে প্রকল্প’ এবং ‘বোর্ডিং ব্রিজ ও কানেক্টিং করিডোর নির্মাণ প্রকল্প—এই দুই প্রকল্পে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে আরও  চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে বর্তমানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল করছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে কুয়েত রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে। এতে বিমানবন্দর আরো বেশি গতিশীল হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বাড়ানোর পরিধি নির্ভর করে যাত্রীর চাহিদার উপর। বাংলাদেশ বিমানের অধিকাংশ এয়ারক্রাফট এখন নতুন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিমানের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বর্তমানে বিমানবন্দর দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এতে করে সরকারি ও বেসরকারি বিমান চলাচল আরো সুবিন্যস্ত ও নিরাপদ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের কার্যক্ষমতা বাড়াতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের ফলে বিমানবন্দরের রানওয়ে লাইটিং সিস্টেমের আরো বেশি উন্নয়ন ঘটবে। ফলে আরো কম ভিজিবিলিটিতে বিমান অবতরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন এখানকার কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে ২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নতুনভাবে কাজ করার সময় দুটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছিল। আরও একটি নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। খুব শিগরই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি কানেক্টিং করিডোর ও প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে সম্প্রসারণ করতে  একটা কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলমান আছে। ট্রাফিক পেটার্ন, ট্রাফিক নম্বর, জায়গার পরিমাণ সবকিছু বিবেচনা করে কনসালটেন্সি ফার্ম যে পরিকল্পনা দেবে, সে মোতাবেক কাজ করার পরিকল্পনা করছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সরকারি ও বেসরকারি বিমান চলাচলকে আরো সুবিন্যস্ত ও নিরাপদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।  পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। সেই সাথে কানেক্টিং করিডোর নির্মাণ ও প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে সম্প্রসারণের জন্য কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগের পরিকল্পনা চলছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দর আরো বেশি শক্তিশালী হবে। আমাদের সিভিল এভিয়েশনে নতুন ১৬শ’ পদের জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে। এরফলে আমাদের কাজে আরো গতিশীলতা আসবে।  

নয় বছরে চট্টগ্রাম থেকে বিমান উড়ে বিশ্বের ৫ দেশে

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃত হলেও বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে বিমান যায় মাত্র পাঁচ দেশে। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই বিমানবন্দর ৮১ বছর পার করলেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আকাশে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ডানা মেলতে পারেনি কোন ফ্লাইট। যদিও কারণ হিসেবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দুষছেন যাত্রী সংকটকে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ভারত, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার ও সৌদি আরবে সরাসরি ফ্লাইট চালু আছে। যাত্রী সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে সরাসরি কোন ফ্লাইট চালু করা যাচ্ছে না। 

তাদের তথ্যানুসারে, অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ৩৪ থেকে ৩৬টি বিমান ওঠানামা করে। অন্যদিকে শুক্র, শনি, রবি ও মঙ্গলবারে আন্তর্জাতিক রুটে ৬ থেকে ৭টি বিমানের ওঠানামা থাকলেও বুধ-বৃহস্পতি পুরোপুরি বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে সপ্তাহে ৪৬ থেকে ৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে এ বিমানবন্দর দিয়ে। 

সরকারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বেসরকারি ইউএস বাংলা, নভোএয়ার রিজেন্ট এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। যদিও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এয়ার এস্ট্রা ও এয়ার বাংলা নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিমান যোগ হতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান উড়ানোর কথা তাদের।

কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন সমস্যা নেই। তবে সেটা অবশ্যই নির্ভর করে যাত্রীদের চাহিদার উপর। যাত্রী স্বল্পতার কারণে সব দেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা যায়না। যে দেশে চাহিদা বাড়বে, সে দেশে ফ্লাইট চালু করা যাবে। কুয়েত রুটে চাহিদা থাকায় সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া গেছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে এই রুটে বিমান উড়াবে জাজিরা এয়ারওয়েজ।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন সিভয়েসকে বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কেবল তখনই বাড়ানো যায় যখন যাত্রীর চাহিদা থাকে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যে বর্তমানে ভারত, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার ও সৌদি আরবে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু আছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কুয়েত সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে আন্তর্জাতিক রুটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের খাতায় আরেকটি দেশ যুক্ত হবে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সরাসরি সব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটি শুরুতে চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড নামে পরিচিতি পেলেও পরে এটিকে এম এ হান্নানের নামে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল ফের নাম বদলিয়ে এটিকে দরবেশ শাহ আমানতের নামে নামকরণ করে তৎকালীন সরকার। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা থেকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পায় বিমানবন্দরটি। 

প্রসঙ্গত, আজ ৭ ডিসেম্বর ‘এডভান্সিং ইনোভেশন অব গ্লোবাল এভিয়েশন’ প্রতিপাদ্যাকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি বিমান চলাচল দিবস। পাঁচ বছর ধরে এ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ প্রতিপাদ্যেই দিবসটি পালিত হবে।

১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে সদস্য দেশগুলোকে প্রতি বছর ৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবস পালনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। যদিও এর আগে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও) ৭ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল দিবসের ঘোষণা দেয়। ১৯৯৪ সালে আইকাওয়ের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বছর প্রথম দিবসটি পালন করা হয়।

সিভয়েস/এএস

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়