Cvoice24.com

বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চমেকে বন্ধ হলো কিডনি ডায়ালাইসিস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চমেকে বন্ধ হলো কিডনি ডায়ালাইসিস

বৃহত্তর চট্টগ্রামের কিডনি রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি)- আওতায় সরকারের চালু করা কিডনি ডায়ালাইসিস কার্যক্রম ফের বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। গত দুই বছরের বকেয়া ২৩ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় সংস্থাটি গত ৩১ জানুয়ারি এক নোটিশ দিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

যদিও এর আগে জানুয়ারির ২ তারিখ একইভাবে নোটিশ দিয়ে বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও ৪ জানুয়ারি সাত দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে পুনরায় সেবা চালু রাখে কর্তৃপক্ষ। তবে সেই আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় এবার একেবারেই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেয় স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছে সেবা প্রার্থী রোগীরা। 

ব্যয়বহুল এ চিকিৎসায় যেখানে চমেক হাসপাতালে সপ্তাহে তিনবার এক হাজার ৫৩০ টাকায় একজন রোগীকে ডায়ালাইসিস করা যায় সেখানে বাইরে লাগে ১০ হাজারেরও বেশি। চমেক হাসপাতারে সেবা বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে দিশাহারা হয়ে পড়েছে রোগীর স্বজনেরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, কিডনি রোগীরা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে রক্তস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট ও শরীর ফুলে গিয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। 

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবিরকে জানানো হলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘অনেকগুলো টাকা বকেয়া থাকায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টা আমাদের হাতে নেই। কোম্পানির মাধ্যমেই ডায়ালাইসিস সেবাটা দেওয়া হতো। এখন তারা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় এমন অবস্থায় পড়েছে। তবে আমরা দ্রুততম সময়ে কিভাবে বিষয়টিকে সমাধান করা যায় সে নিয়ে বিকল্প উপায় বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে কোনোভাবে রোগীদের অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থা করছি।’

এদিকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে লাগানো ৩১ জানুয়ারির ওই নোটিশে বলা হয়, ডায়ালাইসিসের মত জরুরি সেবা বন্ধ করার কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু এ সেবা চালিয়ে যাওয়ার কোন অবস্থাও আমাদের নেই। ২ বছরের বেশি সময়ের বকেয়া জটিলতা অমিমাংসিত থাকায় বর্তমানে আমাদের কার্যকরী তহবিল শূন্য। এমতাবস্থায়, অত্যন্ত পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি যে, আমাদের বকেয়া প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে সৃষ্ট তহবিল শূন্যতার কারণে কাঁচামাল ক্রয়ে অসমর্থ হওয়ার দরুণ এ জরুরি সেবা হয়তোবা পরবর্তী দুএকদিনের বেশি চলমান রাখা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

নোটিশে আরও বলা হয়, প্রতিদিন ডায়ালাইসিস সেবা চলমান রাখার জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার কাঁচামাল প্রয়োজন যা সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে বাকিতে ক্রয় করতে হয়। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে প্রদত্ত সেশনের বিপরীতে কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের মোট বকেয়া ২৩ কোটি টাকা। এভাবে দেনাদার ও পাওনাদারদের পরিমাণ বাড়িয়ে বিশাল দায় নিয়ে সঠিকভাবে নিরবিচ্ছিন্ন কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। সর্বশেষ স্টাফদের বেতন দিয়ে কাঁচামাল ক্রয় করে সেবা অব্যহত রাখার শেষ চেষ্টাটুকুও করেছি।

‘বিলম্বে অর্থ প্রদানের সংকট ব্যতীত বিগত ৫ বছরে আমাদের এ জরুরি সেবা ১ঘন্টার জন্যও বন্ধ থাকেনি। ভয়াবহ করোনাকালীন সময়েও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ ও বিকল্প আবাসিক ব্যবস্থা করেও ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন সেবা চালু রেখেছি। সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষ ৭ দিনের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট সমধানের নিশ্চয়তা প্রদান করলে সাপ্লায়ারদেরকে পোস্ট ভেটেড চেক দিয়ে ও সরকারি চিঠি প্রদর্শন করে সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম অব্যহত রাখি যা এ মুহুর্তে সাপ্লায়ারদের কাছে আর গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না বিধায় কতিপয় সাপ্লায়ার ইতোমধ্যে সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। অতএব কোন প্রকার অনভিপ্রেত ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য রোগীকে সময়মত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করা হল।’

সিভয়েস/এসআর/এএস

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়