Cvoice24.com

দেখা নেই বৃষ্টির, মেঘ-রোদ্দুর লুকোচুরি খেলায় হতাশ হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা

মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১৫ মে ২০২২
দেখা নেই  বৃষ্টির, মেঘ-রোদ্দুর লুকোচুরি খেলায় হতাশ হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা

ছবি: হালদা নদীতে মা মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত ডিমসংগ্রহকারীরা

এই রোদ, এই মেঘ। দেখা নেই বৃষ্টির। মেঘ-রোদ্দুর লুকোচুরি খেলায় হতাশ হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারীরা। বজ্রপাতসহ মুশলধারে বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে বলে ধারণা হালদা বিশেষজ্ঞদের। 

নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়লেও এখনো ডিম ছাড়েনি। এপ্রিল মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যে কোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েক দিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময় মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। গত শুক্রবার পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে, মেঘের গর্জনসহ ভারিবর্ষণ হলেই ডিম ছাড়বে মা মাছ। 

এদিকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে নৌকা আর বাঁশের ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে জাল ফেলে ডিমের অপেক্ষায় শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।

রবিবার (১৫ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিম ছাড়েনি মা মাছ। যদিওবা গত শুক্রবার থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নড়াচড়ায় মা মাছের পেট থেকে খসে পড়া ৭ থেকে ৮টি করে ডিম উঠেছে জেলেদের জালে। তবে এটি নমুনা ডিমও নয়, অপরিপক্ব ডিম বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। 

গত শুক্রবার শুরু হওয়া পূর্ণিমার জো শেষ হবে ১৮ মে। এর মধ্যে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হলেই মা মাছ প্রথমে নমুনা ডিম, পরে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এখন কেবল অপেক্ষা লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের। হালদা নদীর মা মাছ তথা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় মাঠে রয়েছে রাউজান ও হাটহজারী উপজেলা প্রশাসন। গত শনিবার রাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় অভিযান পরিচালনা করে নৌকাসহ ৩০০টি বড়শি, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ক্যামিক্যাল জব্দ করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। 

মাছ ধরার প্রচেষ্টার দায়ে একব্যক্তিকে ১ মাসে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত । এর আগে রাউজানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুইজনকে ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ কবির সোহাগ।  হালদা গবেষকদের ধারণা, চলতি প্রজনন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নদীর পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্পজাতীয় অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস মা মাছের ডিম ছাড়ার নজির তৈরি হতে পারে। 

কয়েক যুগ ধরে ডিম সংগ্রহ করে আসা অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী হালদা পাড়ের বাসিন্দা কামাল সওদাগর বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে নমুনা ডিম ছাড়তে পারে। তবুও ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত। ডিমের অপেক্ষায় নদীতে অবস্থান করছেন তারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নদীর দুপাড়ে প্রায় ১৭০টি মাটির কুয়াও। প্রতিটি নৌকার পেছনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। খরচ বাঁচাতে অনেকেই বাঁশের ভেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এবার ডিম সংগ্রহে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। 

রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর বলেন, অল্পসংখ্যক ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা । নমুনা ডিম না হলেও মাছের নড়াচড়ায় খসে পড়া ডিম পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলে নমুনা ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। রাউজান ও হাটহাজারী অংশের ৪টি হ্যাচারিসহ দুপাড়ের মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, এখনো মা মাছ ডিম ছাড়েনি। বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছের নড়াচড়ায় খসে পড়া ৭-৮টি ডিম পাওয়া গেছে। নমুনা ডিম নয় এগুলো। এমনকি নিষিক্ত ডিমও নয়। 

তিনি আরও বলেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত একটা জো চলে গেছে। বৃষ্টি হলেও পর্যাপ্ত ছিল না। শুক্রবার শুরু হওয়া জো থাকবে ১৮ মে পর্যন্ত। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হলে এই জোতে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী ২৫ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আরও একটি জো আছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়