Cvoice24.com

মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনা/
‘মাইক্রোবাসটি ঝুলছে রেলের ইঞ্জিনে’

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২৯ জুলাই ২০২২
‘মাইক্রোবাসটি ঝুলছে রেলের ইঞ্জিনে’

খান মোহাম্মদ মোস্তফা একজন সমাজকর্মী। স্বপ্নতরী ৭১ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোক্তা তিনি। খৈয়াছড়া ঝর্ণার পাশের রেল গেইটে একটি বানরকে অবমুক্ত করতে গিয়ে চাক্ষুষ দেখেছেন দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত। 

মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনা নিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার বর্ণনা ও দুর্ঘটনা পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কে। 

সিভয়েসের পাঠকদের জন্য খান মোহাম্মদ মোস্তফার স্ট্যাটাস হুবহু তুলে দেয়া হলো —


‘‘কি হয়েছিল আজকে মীরসরাই? 

ঘটনার উৎসস্থল আমাদের বাড়ি থেকে একটু উত্তরেই। রেল গেইটের সামনে। পূর্ব খৈইয়াছড়া, বারতাকিয়ায়। খৈইয়াছড়া ঝর্ণা থেকে হাইওয়ের দিকে যাওয়ার সময়, রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে ঢাকা থেকে আগত চট্টগ্রামগামী রেল প্রভাতী এক্সপ্রেসের মধ্যখানে আটকা পড়েন। একদম সিনেমা স্টাইলে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে রেল থামে। 

আমি তখন রেললাইনে দাঁড়ানো, হঠাৎ রেলের দিকে তাকাতেই দেখি মাইক্রোবাসটি ঝুলছে রেলের ইঞ্জিন বগিতে, ভেতরে ছেলেদের দেখা যাচ্ছে!  আমিসহ সবাই হতবিহ্বল প্রত্যক্ষদর্শীরা! মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের পানি টলমল করছিল। (এলাকার কিশোর ছেলেদের থেকে একটা বানরকে বাঁচাতেই সেখানে গেছিলাম) 

এরপরই দৌঁড়ে দৌঁড়ে গেলাম আমরা বারতাকিয়া রেল স্টেশনের কাছাকাছি, ঝিলিপুল। ততক্ষণে প্রায় ১১জন মারা গেছে। দু'জন জীবিত ছিলো। অনেকে ছবি-ভিডিও নিচ্ছে! আমি চিল্লাফাল্লা শুরু করলাম। এলাকার বন্ধুদের কল দিয়ে পেলাম না। সাংবাদিক নুরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান, ডা. প্রবাল পালসহ কয়েকজন সিএনজি ড্রাইভারকে ফোন দিলাম এম্বুলেন্সের জন্য। জুমার সময় হওয়াতে স্টেশনে কোন ড্রাইভার পাওয়া যাচ্ছিল না। 

এর মাঝে স্টেশনের ফরহাদ, ইরান, আমাদের এদিকের মিরাজ, ইমন, রিপন, ইমনসহ আরও কয়েকজনের সাহায্যে আমরা দু'জনকে স্টেশনে নিয়ে রিকশার মাধ্যমে একজনকে মিরসরাই সেবা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। এরপর পুলিশ-ফায়ার সার্ভিসসহ এম্বুলেন্স আসে। একজন ট্রেনের যাত্রী উদ্ধার কাজে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছিল, পরে সেন্সলেন্স হয়ে পড়েন উনি। আরও ক'জন ট্রেনের যাত্রী সাহায্য করে। অধিকাংশ মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে মাত্র। কয়েকজনরে অনুরোধ করা সত্ত্বেও সাহায্য করে নাই। সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম শহীদ, প্রায় পুরোটা সময় ছিলো। 

একজন মারা যাওয়ার মতো অবস্থায় হওয়াতে খুব অসহায় লাগছিল, পরে রিকশা থেকে নামিয়ে এম্বুলেন্স করে সেবাতে নেওয়া হয়। এরমাঝে লাফ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ছেলে একটারে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ‘ঝাপিয়ে পড়া আরও তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলো।’ 

ধীরেধীরে সবাই আসে। উদ্ধার কাজ চলে প্রশাসনের মাধ্যমে। এলাকার ছেলেপেলেরাও সাহায্য করে।  ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনের লোকজন উদ্ধার কাজে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলো। 

ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছে, গেটম্যান নামাজে ছিল, কেউ বলছে মাইক্রো ড্রাইভার জোরপূর্বক ক্রসিং সিগনাল মানে নাই! এটার তদন্ত দরকার। 

এমন সারিবদ্ধ লাশের দৃশ্য আমাকে ট্রমার মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে একজনের আত্মহত্যা, পাগলি একটার রহস্যজনক রেললাইনে এক্সিডেন্টসহ এমন মারাত্মক স্মৃতিগুলো আমি নিতে পারছি না। আজকের এক্সিডেন্ট একেবারে ভয়ানক। টুরিস্ট স্পট, রেলক্রসিংসহ সকল পাবলিক স্পটের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও অনেক বেশি জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে। রেললাইনের প্রতিটা ক্রসিংয়ে যাতে দক্ষ গেটম্যান থাকে। 

সবাই সাবধানে থাকবেন। কোথাও গেলে আশেপাশের দিকে তাকিয়ে পার হবেন। যেকোনো এক্সিডেন্টের আগে উদ্ধার কাজে সাহায্য করবেন। মানুষ কিংবা যেকোনো প্রাণী বাঁচানোটাই ঐ মূহুর্তে প্রধান কাজ। অযথা ভিড় করবেন না। অপ্রয়োজনে ছবি-ভিডিও করে নিজেকে নির্বোধ প্রমাণ দিবেন না।
আজকে মারা যাওয়ার ভাইদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’

সিভয়েস/এআরটি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়