Cvoice24.com

মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনা/
‘ওরা ১১ জন’—বেঁচে নেই কেউই

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৯ জুলাই ২০২২
‘ওরা ১১ জন’—বেঁচে নেই কেউই

‘ওরা ১১ জন’। নামটা দেখেই প্রথমে মাথায় আসবে চাষী নজরুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের কথা। কিন্তু নাহ! ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের কোনো চরিত্র না। বেঁচে থাকলে হয়তো হতেও পারতো। কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। খৈয়াছড়ায় ঝর্ণায় গ্রুপ বেঁধে যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে আজ থেকে ‘ওরা ১১ জন’ শুধুই ছবি। নিহত ১১ জনের মধ্যে কেউ ছাত্র, কেউ শিক্ষক আবার কেউবা চালক। তাদের আনন্দযাত্রা নিমেষে পরিণত হলো শেষযাত্রায়। 

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখে ফেরার পথে হাসিমাখা মুখগুলো এক মুহূর্তেই ছবি হয়ে গেল। জীবনের শেষ ছবি তাঁরা সারি বেঁধে আগপিছ করে দাঁড়িয়ে তুলেছিল। ছবিতে থাকা সেই ১৪ জনের দলে ১১ জনের স্বপ্ন মিশে গেল ট্রেনের চাকায়। ১৮ জন বহনকারী মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে যায় ট্রেনটি। কথা ছিল পিকনিক শেষে ঘরে ফিরবে তাঁরা। জীবনকে রাঙিয়ে নেবে নতুন সাজে। ঘরে তাঁরা ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। কেউবা বলছে, চালকের ভুলে; আবার কেউ বলছে গেটম্যানের অবহেলা। ঘটনার পরপরই আটক করা হয়েছে গেটম্যান সাদ্দামকে। 

কিন্তু ভুল যারই হোক অথচ মাশুল দিতে হলো নিরীহ সেই ১১ জনকে। এ ঘটনায় রেলওয়ে থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গেটম্যানের অবহেলায় এ দুঘর্টনা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কি সেই সত্য উঠে আসবে কিনা তাই নিয়েও সন্দেহ নিহতদের স্বজনদের। 

১৮ জনের সেই টিমে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, চালক ও চালকের সহযোগী। কেউ কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়। আর ১১ জনের নিতর দেহের অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। নিহতরা সবাই ছিলেন হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের যুগিরহাট এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে চারজন আর এন জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থী, আর বাকি দুজন চালক ও সহযোগী। 

মারা গেলেন যারা— চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), এসএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান (১৯), আর এন জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক জিয়াউল হক সজীব (২২), শিক্ষক ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), শিক্ষক মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), শিক্ষক রেদোয়ান চৌধুরী (২২), শিক্ষার্থী মোসহাব আহমেদ হিশাম (১৬), শিক্ষার্থী সাগর (১৮), ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), তাসমির হাসান এবং সাজ্জাদ (২৩)। 

আহত সাতজন হলেন— মাইক্রোবাসের হেলপার তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহিম (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯), এসএসসি পরীক্ষার্থী তছমির পাবেল (১৬) ও মো. সৈকত (১৮) এবং আয়াতুল ইসলাম (১৮)। 

এ দুঘর্টনায় বেঁচে ফেরা মো. ইমন অন্যদের তুলনায় কিছুটা সুস্থ আছেন। আঘাত গুরুতর না হলেও তিনিও চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় ট্রমার মধ্যে আছেন। রেলক্রসিংয়ের কাছে গেটম্যান ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে দেখতে পাইনি। রেলক্রসিংয়েরও কোনো সিগন্যাল ছিল না। আমি মাইক্রোবাসের শেষের সিটে বসে ছিলাম। আমাদের মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে অনেকদূর নিয়ে যায় ট্রেনটি। আমি মাইক্রোবাসের কাচ ভেঙে বের হয়ে যাই। যে কারণে এখনো বেঁচে আছি নতুবা আমিও আমার বন্ধুদের সঙ্গে লাশ হয়ে যেতাম।’

গেল দু’মাস আগে স্নাতক পড়ুয়া চার বন্ধু মিলে ৫০ হাজার টাকা ধার দেনা করে কোচিং সেন্টার চালু করে। সে টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি। তার আগেই চার বন্ধুর স্বপ্নের সঙ্গে মিশে গেল ওদের এগারো জনের স্বপ্ন।

সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়