মান্নানের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ সন্দ্বীপের তরুণরা আঙ্গুল তুলছে স্থানীয় প্রশাসনের দিকে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৪ আগস্ট ২০২২
মান্নানের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ সন্দ্বীপের তরুণরা আঙ্গুল তুলছে স্থানীয় প্রশাসনের দিকে

সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে সার্ভিস বোট থেকে লালবোটে নামতে গিয়ে নদীতে পড়ে ডুবে মারা যাওয়া মাস্টার আবদুল মান্নানের মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও কালো ব্যাজ ধারণ করে কর্মসূচি পালন করেছে সন্দ্বীপের তরুণরা। 

বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে এনামনাহার মোড়ে সন্দ্বীপ থানার সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পেছনে ঘাট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং সে বিষয়ে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। 

আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পেছনে ঘাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরে মুছাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাইম উদ্দিন মানববন্ধনে বলেন, ‘আব্দল মান্নান মাস্টার যখন নদীতে পড়ে যায় তখন তার দিকে রশি ছুড়ে মারা হয়েছিলো। কিন্তু কথা হলো সার্ভিস বোটেতো বয়া থাকার কথা। বয়া ছিলো না বলেই রশি মারা হয়েছে। মান্নান রশি ধরতে ব্যর্থ হয়ে ডুবে যায়। এই বয়া না থাকাটাই অব্যবস্থাপনা। তাছাড়া এসব অব্যবস্থাপনা ঢাকতে তারা প্রচার করে কেউ নদীতে পড়েনি। অথচ দুই দিন পর তার মরদেহ পাওয়া গেলো। তারা যদি সত্য বলতো তাহলে প্রশাসন উদ্ধার অভিযান চালাতে পারতো।’

এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নির্বিকার থাকার কারণ নিয়েও সমাবেশে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। 

এর আগে মান্নানের মৃত্যুর জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ছাড়াও প্রশাসনের দায় না নেয়ার মানসিকতাকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক স্ট্যাটসে মান্নানের প্রবাসী ছেলে সাগর আলী লিখেছেন, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে, মৃত্যুর পর তার মরদেহের সাথেও অন্যায় করা হয়েছে। কখনো ভাবিনি এমন একটা ঘটনা আমাদের সাথে ঘটবে। এ ঘাটের অনেক নিয়ম-অনিয়ম জানি, এসব নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা যদি আগে সফল হতেন তাহলে হয়তো আজ আমার বাবার এই অবস্থা হতো না। আজকে বুঝতে পারছি আপনাদের এই আন্দোলন এই কথা বলা সন্দ্বীপের সব মানুষের জন্যই। আমার বাবার পর সন্দ্বীপের আরেকটা মানুষ এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার না হোক।’

নিজের ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে দেয়া ওই পোস্টে সাগর আলী লিখেছেন, ‘প্রশাসন যদি কদিন আগে ৩ বাচ্চা ডুবে মরে যাওয়ার ঘটনা সিরিয়াসলি দেখতো তাহলে হয়তো এমন হতো না। তখনো আপনারা আন্দোলন করেছেন প্রশাসন ঠিকই ঘাট কর্তৃপক্ষের দালালি করেছে। অথচ যদি তারা একটু দায়িত্বশীল আচরণ করতো তাহলে আমার বাবার জন্য আজকে আপনাদের আন্দোলন করতে হতো না। আপনাদের আন্দোলনের প্রতি প্রবাস থেকে ভালোবাসা ও সমর্থন জানাচ্ছি। যতদিন সুষ্ঠু নৌ যাতায়াতের দাবি আদায় না হবে ততদিন আপনাদের এই আন্দোলন চলতে থাকুক।’

সমাজকর্মী নজরুল নাইমের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক চারু মিল্লাত, কবি মোস্তফা হায়দার, এবি কলেজ শিক্ষার্থী নাঈম, আরমান জাবেদ, রুস্তম, ফাহাদ প্রমুখ। 

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে এই রুটে নৌ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। এছাড়াও নৌ যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় নিয়মিত এই রুট পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা পাওয়া নিশ্চিত করতে না পেরে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এসব নিয়ে দীর্ঘদিন সন্দ্বীপের মানুষের প্রান্তিক পর্যায় থেকে আন্দোলন কর্মসূচি চললেও এসব নিয়ে কখনোই কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় প্রশাসনকে। 

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিআইডব্লিউটিসির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে জেলা প্রশাসনের সব ঘাট বন্ধ রেখে শুধুমাত্র কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাট সচল রেখে সেখানে মনোপলি ব্যবসা করছে একটি সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিয়মিত মাসোহারা পান বলেও স্থানীয় পর্যায়ে গুঞ্জন রয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়