বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ার ঘটনায় থানায় মামলা, গ্রেপ্তার নেই কেউ
সিভয়েস প্রতিবেদক

দুই মামলার আসামিরা।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলার ঘটনায় আদালতের নির্দেশে মামলা নিলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৮ ও ২০ এপ্রিল মিরসরাই এবং জোরাগঞ্জে দু’দফায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার লাগানোর সময় নেতাকর্মীদের মারধর করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টারগুলো ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে দুই যুবলীগ নেতার অভিযোগ দুটি গত বুধবার রাতে এজাভারভুক্ত করে পুলিশ।
বুধবার (৩ মে) চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযোগ দুটি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
এর আগে, গত ৩০ এপ্রিল উপজেলা যুবলীগ কর্মী আছিফুর রহমান ও আইনুল কবির বাদী হয়ে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালতে ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। পরে ২ মে আবেদন দু’টি আমলে নিয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে প্রতিবেদন দিতে জোরারগঞ্জ ও মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামিরা হলেন— মাহফুজুল হক জুনু (৫৮), তানভীর হোসেন চৌধুরী তপু (৩১), মো. মাসুদ করিম রানার (২৯), নাজিম উদ্দিন রুবেল (৪৬), মো. মুসলিম (২৮) এবং মাহফুজ উদ্দিন (২৬)। এরমধ্যে জুনু, তপু এবং রানার বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় এবং রুবেল, মুসলিম ও মাহফুজের বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
মামলার বাদী আছিফুর রহমান বলেন, ‘পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনায় মামলা হওয়ার পরও আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেননি।’
অপর মামলার বাদী আইনুল কবির বলেন, আসামিরা স্বাধীনভাবে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। তাই অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি যাতে দলের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা এসব মুখোশধারীরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর ঘটাতে না পারে।’
অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘আদালত মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। ৩ মে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’
একই কথা জানিয়েছেন জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত চলছে; তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ১৮ ও ২০ এপ্রিল যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের পক্ষে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের পোস্টার লাগানোর সময় নেতাকর্মীদের মারধর করে ঈদের বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টারগুলো ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেন দুস্কৃতিকারীরা।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের পক্ষে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার লাগানোর উদ্যোগ নেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। গত ১৮ এপ্রিল বারৈয়ারহাট পৌরসভা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে মিরসরাই উপজেলা যুবলীগ নেতা আসিফুর রহমানের নেতাকর্মীরা পোস্টার লাগাতে গেলে অজ্ঞাত ২০-২৫ জন লোক মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিয়ে নেতাকর্মীদের কার নির্দেশে পোস্টার লাগানো হচ্ছে জানতে চেয়ে মারধর শুরু করে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এসময় নেতাকর্মীরা মোবাইল ফোনে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে আহতবস্থায় তাদের জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে বারৈয়ারহাট মসজিদের সামনে নিয়ে যুবলীগ নেতৃবৃন্দকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আবারও মারধর করে পোস্টার লাগালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়।
এ ঘটনার দুদিন পর ২০ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে মিরসরাই ভূমি অফিসের সামনে মিরসরাই উপজেলা যুবলীগ নেতা আইনুল কবিরের নেতৃত্বে কর্মীরা পোস্টার লাগাতে শুরু করলে আসামিরা দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক মোবাইল ফোন ছিনিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। এসময় আসামিরা তাদের নেতার বাইরে অন্য কারও পোস্টার লাগালে, তাদের কথা না শুনলে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে লাগানো পোস্টারগুলো ছিড়ে ফেলে।