মিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ইকবালের বাজিমাত
ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ভালো করেছেন ইকবাল হোসেন সোহেল নামের এক তরুণ। প্রথম বারের মত এই ফলের চাষ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর দেখাদেখি অনেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চাষের শুরুতে এলাকার লোকজন যারা তাকে তিরস্কার করেছে, এখন তাঁরা ইকবালের প্রশংসা করছে। ইকবাল মিরসরাই উপজেলার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামের জামশেদ আলমের পুত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।
জানা গেছে, গত বছর বাড়ির অদূরে ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে শীতকালীন টমেটো ও শষা চাষ করেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমবারের মত ওই জমিতে গ্রীষ্মকালীন মালচিং পদ্ধুতিতে তরমুজ চাষ করেছেন ইকবাল। চলতি বছরের জুলাই মাসে জমি প্রস্তুতের পর বীজ বপন করেন। এখন বাজারে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন। তরমুজ চাষে নেয়া হয়েছে মালচিং ও অর্গানিক পদ্ধতি। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সহযোগীতা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫ শতক করে পাশাপাশি দুটি জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ক্ষেতের চারিদিকে নেট দিয়ে ঘেরা দেয়া হয়েছে। মালচিং পদ্ধুতিতে চাষ করা প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজে প্যাকেট আটকানো রয়েছে। বিভিন্ন সাইজ ও বিভিন্ন রংয়ের তরমুজ দেখা মিলছে। ছোট ভাই ও দুজন কাজের লোক সাথে নিয়ে ক্ষেতে পরিচর্চা করছে চাষী ইকবাল। নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের আওতায় আবাদ করা তরমুজ ক্ষেতগুলোতে নেয়া হয়েছে অর্গানিক ও মালচিং পদ্বতি। পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড।
ইকবাল হোসেন সোহেল বলেন, এইচএসসি পাশের পর মিরসরাই পৌর সদরে একটি গার্মেন্টস সামগ্রীর দোকান দিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালো চলছিল। কিন্তু করোনাকালে ব্যবসা পরিস্থিতি খুব খারাফ হয়, এরপর আর স্বাভাবিক হয়নি। তখন বিভিন ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আধুনিক কৃষির বিষয়গুলো দেখতে থাকি। এরপর মনস্থির করলাম কৃষিকে পেশা হিসেবে নিতে হবে। তখন বাড়ির অদূরে ৫০ শতক জায়গা বর্গা নিয়ে গত বছর শীতকালীন টমেটো ও শষা চাষ করেছি। এরপর জমি খালি হওয়ার পর আমাদের ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১০ ব্যাগ বীজ, মালচিং ও ফেরোমন ফাঁদ দিয়েছে। সম্পূর্ণ অর্গানিক ও মালচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে তরমুজ ক্ষেত। এখানে ইয়েলো গোল্ড, ব্ল্যাকবেরি, তৃপ্তি জাতের তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু রক মেলন জাতের ভাঙ্গিও আবাদ করা হয়েছে। পোকামাকড় রোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। তরমুজের গাছের পরিচর্যার ঠিক রাখার জন্য দেওয়া হয়েছে মালচিং পেপার। উপরে মাচা দিয়ে ফল প্যাকেটজাত করে ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব জাতের তরমুজের ভেতরের অংশের রং লাল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। আমি বীজগুলো শিকড়যুক্ত করে রোপন করায় গাছের গ্রোধ অনেক ভালো হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে পেলে ক্ষেতে পরিচর্চা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, সব গাছে ফলন এসেছে।
ইকবাল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়া আমার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি তরমুজ ১ কেজি থেকে ৪ কেজি ওজনের রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু করবো। এখন বিভিন্ন জায়গায় ভালো দামের পাইকার খুঁজছি। যদিও এখন বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যে পরিমাণ ফলন আসছে, আশা করছি ৫০ শতক জমিতে প্রায় ৪টন তরমুজ হবে। যদি ন্যায্যমূল্য পাই তাহলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, তরমুজ চাষের শুরুতে যারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে, তিরস্কার করেছে তাঁরা এখন প্রশংসা করছে, অনেকে ক্ষেতে তরমুজ দেখতে আসে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। চাষী ইকবাল প্রথমবারের মত গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি অনেক পরিশ্রমী। আমরা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ক্ষেত পরিদর্শন করে আসি। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল হওয়ায় ইকবালের পাশাপাশি তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা।