Cvoice24.com

সাবেক মেয়র বাবার অস্ত্রেই মাকে গুলি করে ছেলে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৮ আগস্ট ২০২২
সাবেক মেয়র বাবার অস্ত্রেই মাকে গুলি করে ছেলে

পটিয়ার প্রয়াত সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের অফিসের ড্রয়ারেই ছিল অস্ত্রটি। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে অস্ত্রটি ব্যবহার করতো তার ছেলে মাইনুল। ব্যাংকে বাবার জমানো টাকা নিয়ে বোন ও মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কোমরে থাকা অস্ত্রটি বের করে প্রথমে বোনকে গুলি করে ছেলে মাইনুল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় বোন। পরে মায়ের দিকে তাক করে গুলি করে। সেই গুলি মা জেসমিন আক্তারের চোখের নিচে ছেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে মৃত্যু হয় তার। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।

বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘সে নেশায় আশক্ত। গাঁজা-ইয়াবা এসব নিয়মিতভাবেই সেবন করতো। ছোটবেলা থেকেই খুব উশৃঙ্খল ছিল। সে পরিবারে এবং এলাকায় বিভিন্নভাবে উশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করতো। তাই ২০১৭ সালে পরিবার তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও বিভিন্ন কারণে থাকতে না পেরে ২ বছর পর সেখানে থেকে দেশে ফিরে আসে। দেশে আসার পর আবারও আগের মতো উশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন শুরু করে। পরিবার থেকে নিজের উশৃঙ্খল চলাফেরার জন্য টাকা না পাওয়ায় সে নাখোশ ছিল। তবে এরপরও তার পরিবার চেষ্টা করছিল তাকে স্ত্রীসহ অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার।’

তিনি বলেন, ‘গত ঈদের পর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসে তার মা ও বোন। তার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থাতেই পারবারিক সম্পদ নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়। কারণ, সে দেখতে পায় ব্যাংকে জমানো টাকাগুলো বেশিরভাগই তার বোনকে উত্তারাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং কিছু টাকা তার মায়ের নামে। জমি-জমাগুলোও তার নামে তেমন বেশি ছিল না। কারণ তার প্রতি তার বাবার কোনো ভরসা ছিল না।’

অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ আরও বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই তারা বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই সম্পত্তি নিয়ে তাদের ভাই-বোনের মাঝে ও ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ তুঙ্গে উঠে যায়। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে মেয়ে নিপাকে নিয়ে ব্যাংকে যান জেসমিন আক্তার। তবে ব্যাংকে থাকা ১৩ লাখ টাকা তারা তুলতে পারেনি। কারণ, বাবা (শামসুল আলম মাস্টার) মারা যাওয়ায় টাকা তোলার উত্তারিধকার হিসেবে নাম ছিল বোন শায়লা শারমিন নিপার নাম। তাই তারা টাকা তোলার প্রসেসটা জানতে গিয়েছিল। কিন্তু মাইনুলকে না জানিয়ে বোনকে নিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার কথা শুনতে পেয়ে দুপুরের দিকে মায়ের সঙ্গে তর্ক শুরু করে। এরই একপর্যায়ে মাকে গুলি করে মাইনুল। মাকে হত্যা করে পটিয়া থেকে প্রথমে চলে যায় দোহাজারী। সেখানে গিয়ে দুই-তিন জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে সে এক বড় ভাইকে ধরে একজনের ফ্যাক্টরির অফিসে রাতযাপন করে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি একটি গুদামের পাশে লুকিয়ে রাখে। প্রতিটি কাজ সে অতন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ও চিন্তাভাবনা করেই করেছে। পরে গতকাল বুধবার বিকেলে একটি বাসে করে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে চুক্তি করে টিকিটও কাটেনি; যাতে তাকে কেউ ধরতে না পারে এবং তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও পানিতে ফেলে দেয়।’

মাইনুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালেরও একটা মামলা আছে এবং অস্ত্র ও অবৈধ সমাবেশসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানান এম এ ইউসুফ।

এর আগে, গত ১৬ আগস্ট বেলা পৌনে ২টার দিকে পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলমের স্ত্রী জেসমিন আক্তার তার সন্তান মাইনুলের গুলিতে নিহত হন। শামসুল আলম মাস্টারের মৃত্যুর এক মাস ২ দিনের মাথায় এই ঘটনা ঘটলো। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে মাইনুলকে আসামি করে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

-সিভয়েস/এমএম/এআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়