Cvoice24.com

বাবুলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে মুছার স্ত্রীর জিডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ১ জুন ২০২১
বাবুলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে মুছার স্ত্রীর জিডি

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দী দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডিটি করেন। 

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি বলেন, ‘পান্না আক্তার সোমবার আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। তিনি ধারণা করছেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার ক্ষতি করতে পারেন। এ কারণে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’ 

এর আগে সোমবার (৩১ মে) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে জবানবন্দি দেন। সেখানে বাবুল আক্তারই মিতু হত্যার মাস্টার মাইন্ড এবং বাবুলের নির্দেশে মুছা এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।  

সাক্ষ্য দেওয়া পান্না আক্তার মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মুছার স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে মুসাকে খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। মুছা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এদিকে জিডির বিষয়ে পান্না আক্তার বলেন, ‘নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডি করেছি। মিতু হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর থেকে নিজের মধ্যে ভয় কাজ করছে। যদিও তাকে কেউ হুমকি দেয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। 

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুছা বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স ও তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াতকারী। মিতু খুনের কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা ডিবি মুছার সম্পৃক্তা নিশ্চিত হয়ে মুসার ভিডিও ও ছবি বাবুলকে দেখায়। কিন্তু বাবুল আক্তার মুছাকে চেনার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অথচ মুছা যে বাবুল আক্তারের সোর্স ও ঘনিষ্ঠ সেটা তদন্ত সংস্থা শতভাগ নিশ্চিত হয়।

কেন বাবুল আক্তার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মুছাকে না চেনার ভান ধরছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত চারমাস ধরে পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো ছাড়াও এই মামলার তদন্তে একযোগে কাজ করে ঢাকার চারটি, গোপালগঞ্জ ও খুলনার দুটি ইউনিট। তারা একইসঙ্গে বাবুল আক্তার, ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুল ও মুসার আত্মীয় গাজী আল মামুনকে নজরদারির আওতায় আনে। এরপর গত ১২ মে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে মুছাকে চেনার বিষয়টি স্বীকার করেন বাবুল আক্তার। এরপর ৫ দিনের রিমান্ডে বাবুল আক্তারই যে খুনের পরিকল্পনাকারী এবং মুছা তার নেতৃত্বদাতা তা পিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করেন বাবুল। 

এদিকে বাবুল আক্তারের গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে থাকেন মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ঘটনার পর ১৬ দিন পর্যন্ত পরিবারের সাথে ছিল মুছা। তখন, বাবুল আক্তার কয়েকটি ল্যান্ডফোন নম্বর থেকে মুছার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। এসময় মুছাকে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শও দেন বাবুল। ধীরে ধীরে সব সামলে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় তাকে।

পান্নার দাবি, দুই ভাইকে আটকের পর খুবই ভেঙ্গে পড়ে মুছা। এসময় মুছা সব ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার হুমকিও দেয় বাবুলকে। এক পর্যায়ে স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথাও।

মুসার স্ত্রীর দাবি, ২০১৬ সালের ২২ জুন নগরের কাটগড় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে মুছাকে তুলে নেয়া হয়। যদিও মুছাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে সে সময় গণমাধ্যমে মুখ খুলতে চাইলে, বাবুলের ঘনিষ্ট দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ করেন পান্না আকতার।

এদিকে গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পরের দিন ১২ মে তার বিরুদ্ধে মিতুর বাবা বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। পরে স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার জন্য রাজি হলেও শেষ মূহুর্তে গিয়ে তা করেননি বাবুল আক্তার। গত ১৭ মে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। এরপর গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়