Cvoice24.com

ধান কাটা শুরু, গুমাই বিলে সোনালি ধানে কৃষকের হাসি

আবদুল কাইয়ূম, রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১২ নভেম্বর ২০২১
ধান কাটা শুরু, গুমাই বিলে সোনালি ধানে কৃষকের হাসি

গুমাই বিলে রাঙ্গুনিয়ার ৫০টির বেশি গ্রামের কৃষকের আবাদ করা ধান কাটার উৎসব শুরু হয়েছে।

কাক ডাকা কুয়াশা মোড়ানো ভোরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সারি সারি কৃষকের দল। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ সেই আঁটি বাঁধা পাকা ধান ঘরে তুলতে কাঁধে বয়ে ছুঁটছেন বিলের পর বিল। চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত গুমাই বিলের এখন নিত্যদিনের চিত্র এটি। এই বিলে ছয়টি ইউনিয়নের পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রামের কৃষকের আবাদ করা আমন কাটার উৎসব শুরু হয়েছে। 

বাতাসে দোল খাওয়া পাকা ধানের গন্ধে বিমোহিত কৃষক। সোনালী আমনে ভরেছে মাঠ, হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে আজ। চোখে, মুখে নেই ক্লান্তির ছাপ। ধানে ধান লেগে শিন শিন শব্দ মনকে করছে প্রাণবন্ত। পাকা ধানের শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে ধান কেটে চলেছে কৃষক।- এমন দৃশ্য দেখা গেছে রাঙ্গুনিয়া গুমাইবিলে।

চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে চলছে ধান কাটা। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিলের ফসলের খেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। নবান্নের আগমনিতে কৃষকেরা যেন সুখের সম্রাট।

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ২৭ কার্তিক থেকে ধান কাটতে শুরু করেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলের চাষিরা। প্রতি বছর এ উপজেলায় অন্যান্য অঞ্চলের আগে ধান কাটা শুরু হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। 

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারে গুমাই বিলে প্রায় ৩৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৭ মেট্রিক টন। ভালো ফলনের কারণে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা সরকারি এই দপ্তরের।

গুমাই বিলের কৃষক রকি দাশ। কয়েক কানিতে আমনের আবাদ করেছেন। এক কানির ধান পেকেছে। আরও কয়েক কানির ধান পাকা বাকি। এই কানির ধান কাটতে মাঠে কাজ করছে নেত্রকোণা থেকে আসা তার চার শ্রমিক। ফলন ভালো হয়েছে। তবে চাষাবাদের খরচের কারণে দাম নিয়ে শঙ্কিত তিনি। 

রকি দাশ বলেন, গতবার ধানের মণ প্রতি ৭০০ টাকা ছিল। ধানের মণ আগের বছরের দামে হলে খরচ পুষিয়ে নিতে পারবো না। শ্রমিকদের দৈনিক ৫০০ টাকার পাশাপাশি তিন বেলার খাবার যোগাতে হয়। বাজারে সবকিছুর দাম এখন বেশি।

নেত্রকোণা থেকে দিন পাঁচেক আগে এসেছে সজিব বিশ্বাস ও দেবাশীস। ধান কাটার মৌসুমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গুমাই বিলে ধান কাটাতে আসে তারা। দিনে যে জমির মালিকের ধান কাটবে, রাতে থাকবে সেই জমির মালিকের বাসায়। তিন বেলা খাওয়া আর দিন শেষে ৫০০ টাকা পায় ধান কেটে। 

নেত্রকোণা থেকে ধান কাটতে আসা সজিব বিশ্বাস বলেন, অনেক দূর থেকে পেটের দায়ে বাচ্চাকাচ্চার জন্য কষ্ট করে কাজ করতে এসেছি। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। দৈনিক ৫০০ টাকা করে বেতন পাই। এখন গাড়ি ভাড়া, আর বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। সেই তুলনায় ৫শ টাকা বেতনে আমাদের হয়না।

রাঙ্গুনিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আকতার সিভয়েসকে বলেন, আমন ও পাইজাম জাতের ধান ভালো ফলন হয়েছে। ব্রি-৪৯,৫৮,৮৭ জাতের ধান বপন করেছিল কৃষকরা। তারও ভালো ফলন হয়েছে। উত্তম, মধ্যম,নিম্ন এই তিন প্রকারে আমরা ধানের ফলন হিসাব করি। এখন কৃষকেরা ব্রী-৪৯ এবং ব্রি-৮৭ আগাম ধান কাটা শুরু করেছে। আমাদের হিসাব অনুসারে উত্তম হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৪.১ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। মধ্যম হলে এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ৩.৮ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর নিম্নে হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৮ টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পানি সেচের জন্য যে সকল কৃষক ড্রেনেজ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে তাদের প্রতি কানিতে খরচ হয়েছে ১২০০ টাকা। আবার যে সকল কৃষক পাওয়ার প্ল্যান্ট সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ৭০০ টাকা প্রতি কানি জমিতে। 

রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা কৃষি অফিসার কারিমা আক্তার সিভয়েসকে বলেন, গতবার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা করে কৃষকরা বিক্রি করেছিল। এবার এখনো সিদ্ধান্ত হয় নি। চলতি মাসের ১৪ তারিখ মিটিং আছে। সেখানে এবার দাম বাড়াবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।  ফলন গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। আশা করি কৃষকরা ভালো দামে তাদের ধান বিক্রি করতে পারবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়