Cvoice24.com

‘এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার নয়’

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবার নয়’

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন আজাদ তালুকদার

অন্যের ঘরের আগুন নিভিয়ে নিজ ঘরে ফেরার পথে একটি পিকআপের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা ওবাইদুল হক জাহেদ (২৫); একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারের ভাষ্য, এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজারহাট চত্বরে আয়োজিত এত মতবিনিময় সভায় সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের নিয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে পদুয়া ইউনিয়নের গার্লস স্কুলের সামনে এক দুর্ঘটনায় নিহত হন উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ওবাইদুল হক জাহেদ। ওইদিন সুখবিলাস এলাকায় বসতবাড়িতে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে সহযোগিতা করে বাড়িতে ফেরার পথে মারা যান তিনি।

জাহেদের স্মৃতিচারণ করে একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার বলেন, ‘মাসখানেক আগে আমার সাথে দেখা করতে এসে জাহেদ তার স্বপ্নের কথা আমাকে বলেছিল। আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল সে অনেক বড় হবে, অনেক দূর যাবে। একমাসের মাথায় তার স্বপ্ন ভেঙে খান খান করা হলো। আমি একে দুর্ঘটনা বলবো না, এটা হত্যাকাণ্ড। জাহেদের মত একজন সম্ভাবনাময় তরুণের প্রাণ যখন ২৫ বছরে ঝরে যায় তখন তার পরিবার, সমাজ যে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। এ ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে ওঠার মতো নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জনপদের গাড়িচালক বা অন্য পেশার মানুষের মনটা ভালো, কিন্তু প্রেজেন্টেশনটা ভালো না। এটা আমাদের সংস্কৃতিগত শূন্যতা। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এই এলাকার গাড়িচালকদের জন্য একটা কর্মশালা করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে এলাকার চালকেরা আরও সমৃদ্ধ হবে। এছাড়া প্রতিটি স্কুলের সামনে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড থাকা দরকার। এই এলাকার কতটি স্কুলের জন্য এই সাইনবোর্ড প্রয়োজন তা আমাকে জানাবেন। আমি নিজ উদ্যোগে প্রতিটি স্কুলের সামনে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দিতে চাই।’

চালকদের নিয়ে মতবিনিময় সভাটি আরও আগে করা উচিত ছিল মন্তব্য করে সম্পাদক আজাদ তালুকদার বলেন, ‘সভাটি আমরা করছি অত্যন্ত বিধ্বস্ত মানসিক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পর। আমরা এই এলাকার দুজন সন্তানকে হারিয়েছি, একজন পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এই তিনটি দুর্ঘটনা হওয়ার পর আমরা সচেতনতামূলক সভা করছি। তারপরও সময়ের প্রয়োজন এই সভার আয়োজন করায় আমি আয়োজকদের সাধুবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘কিছু গাড়িচালক রাস্তায় নেমে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, দানবের রূপ ধারণ করেন। আমার সামনে থাকা এই মুখগুলো ফুলের মত মুখ, তারা কখনো দানব হতে পারেন না। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মহোদয়ের এই আদর্শ গ্রামে এমন কেউ আছে, এটা আমি বিশ্বাস করি না, করতে চাই না।’

মতবিনিময় সভায় পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু জাফর বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী মহোদয় আমাদের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে, চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু এই রাস্তাই আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র ড্রাইভারদের অসতর্কতার জন্য তাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে। গাড়ি মালিকদের উচিত, পেশাদার লোকের হাতে গাড়ি দেওয়া। আর পরিবহন সমিতিরও দায়িত্ব আছে, আপনারা সভা-সেমিনার করুন। চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করুন। এখন থেকে বেপরোয়া গাড়ি চালালে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত হার্ডলাইনে যেতে চাই না। যদি যাই আপনাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে। কিন্তু এখন আমি আইনের পথে হাঁটবো। এখানে উপস্থিত চালকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদের অবশ্যই নিয়ম অনুসরণ করে গাড়ি চালাতে হবে। সকলের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। যাদের লাইসেন্স নেই তারা গাড়ি চালাতে পারবেন না। পেশাদার গাড়ি চালকদের লাইসেন্সের জন্য আমি ১৫ দিন সময় দিলাম। মাদকসেবী, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনেই গাড়ি চালাতে হবে। আমি কাউকে ছাড় দেব না, কারও সুপারিশ শুনবো না। মনে রাখবেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি বলেন, ‘কিছু কিছু চালক এমনভাবে গাড়ি চালায় যেন তারা অন্যান্য গাড়ির আগে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আপনারা কেন এমন করেন? আপনাদের উপর যাত্রীদের জীবন নির্ভর করে। আপনার সামান্য ভুলের জন্য অনেক মূল্যবান প্রাণ ঝরে যেতে পারে৷ মালিকদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই পেশাদার চালক ছাড়া অন্য কাউকে গাড়ি দেবেন না। যাকে গাড়ি দিয়েছেন, তিনি গাড়িটা চালাচ্ছেন, নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছে সেটা খবর রাখবেন।’

পদুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল আলম সায়েদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ দুলাল কান্তি দাশ। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পদুয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদ হাসান তালুকদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. তারেক সোহেল, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আতিকুল্লাহ ইয়াসিন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক উদ্দিন রানা ও শ্রমিক লীগের সভাপতি সোহেল আজাদ।

উপস্থিত ছিলেন পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এমদাদ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক মাস্টার, আনোয়ারার ব্যবসায়ী ও সমাজব্রতী লায়ন আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম আইটি ফেয়ারের স্বত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়