Cvoice24.com

রাঙ্গুনিয়ায় কন্যা ‘বিক্রি’র ঘটনার নেপথ্যে...

অর্ণব মল্লিক, রাঙ্গুনিয়া থেকে

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ৩ জুলাই ২০২৪
রাঙ্গুনিয়ায় কন্যা ‘বিক্রি’র ঘটনার নেপথ্যে...

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এক দম্পতি আশা করেছিলেন পুত্র সন্তানের। তৃতীয়বারও কন্যা সন্তান হওয়ায় ওই কন্যাকে বিক্রি করে দেন বাবা! এমনি একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) পারভেজ হোসাইন নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে এটি আলোচনায় আসে।

পারভেজ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে বন্ধুর মাকে রক্ত দিতে যাই। পাশে এক মা তার সদ্যজাত কন্যাসন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিলেন। কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, তার স্বামী বাচ্চা বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাচ্চার বাবার (সাদ্দাম) নামের ওই লোকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, হাসপাতালের বিলের টাকা দিতে না পারায় অন্যত্র বাচ্চাটিকে দিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এ সময় পারভেজ চেষ্টা করেন টাকার ব্যবস্থা করে বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু বাবা রাজি না হওয়ায় তা পারেননি।’  

ঘটনার সত্যতা জানতে গিয়ে ওই ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে সিভয়েস২৪। তাঁরা জানান, ২৯ জুন দুপুরে চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন সুমী নামের একজন মহিলা। তার স্বামীর নাম সাদ্দাম। পেশায় তিনি একজন সিএনজিচালক। তারা রাঙ্গুনিয়া মরিয়ম নগর এলাকার বাসিন্দা। পরে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (২ জুন) বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালের বিল বাবদ ১২ হাজার টাকা এবং ওষুধ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা বাকি ছিল। 

কিন্তু ওই সময় তৃতীয়বারও কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় অসন্তুষ্ট দেখা গেছে বাবা সাদ্দামকে। একসময় তিনি বাচ্চাটিকে বিক্রয় করে দিবেন বলে শোনা যায়। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কেনার জন্য কিছু লোক হাসপাতালে এসেছে বলেও জানা গেছে। ওই সময় ওই বাচ্চার মা সুমী কান্নাকাটি করলে ঘটনাটি সবার নজরে আসে।

তবে এই সংবাদ শোনার পর সাদ্দাম হোসেনের কাছে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি জানান, অভাবের সংসারে সদ্যজাত শিশুর জন্মের পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে টাকার বিনিময়ে নয়, ৫০ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল ও চিকিৎসা বাবদ নিয়ে নিকটাত্মীয়ের কাছে কন্যাসন্তানকে দিয়েছেন বলেও জানান সাদ্দাম।

মরিয়মনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল কবির শিকদার জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন তারা কয়েকজন।

বাচ্চা ‘বিক্রি’র খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাশাপাশি অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠন বাচ্চাটির পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়া অনেকে সাদ্দামের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, বর্তমান আধুনিক যুগেও কন্যাসন্তান হওয়ায় যদি এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়; তা অনেক দুঃখজনক।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: