Cvoice24.com

হালদা পাড়ের মাটির কুয়ায় রূপালী স্বপ্ন 

মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৮ এপ্রিল ২০২১
হালদা পাড়ের মাটির কুয়ায় রূপালী স্বপ্ন 

মাটির কুয়া তৈরিতে ব্যস্ত হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী। এপ্রিল থেকে জুন— এই তিন মাস ধরা হয় প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) মা মাছ।

ইতোমধ্যে নদীতে মা মাছের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশ। বেড়েছে গাঙ্গেয় ডলফিনের মাতামাতিও। ডিম ছাড়তে পারে যে কোনো সময়। এটিকে মাথায় রেখে মাটির কুয়া তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। 

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কুয়ায় ডিম ফোটালে সংগ্রহকারীদের কষ্ট বেশি হয়, লাভবান হন মৎস্যচাষীরা। কেননা এসব কুয়ায় প্রায় অর্ধেক ডিম নষ্ট হলেও পোনা হয় সবল। অন্যদিকে হ্যাচারিতে ডিম ফোটালে সংগ্রহকারীদের কষ্ট কম হলেও মৎস্যচাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে অভিজ্ঞতা অনুসারে ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের পরিমাণ কম-বেশি হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারীরা বলছেন, হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফোটালে ৯০ শতাংশ টিকে। অন্যদিকে মাটির কুয়ায় ফোটালে টিকে ৬০ শতাংশ। কিন্তু এসব রেণু সবল ও দ্রুত বর্ধমান। আর হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণু দুর্বল ও বিকলাঙ্গ হয়। দ্রুত বর্ধমানও নয়। সে হিসাবে হ্যাচারির তুলনায় মাটির কুয়াই রেণু উৎপাদনে ভালো। 

সরেজমিন দেখা যায়, হাটহজারীতে ডিম সংগ্রহকারীদের ২৫টি গ্রুপ ৭০টি মাটির কুয়া এবং রাউজানে ২৭টি গ্রুপ প্রস্তুত করেছে ৭৫টি মাটির কুয়া। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা ডিম ফুটানোর জন্য মোট ছয়টি হ্যাচারি নির্মাণ করেছিল মৎস্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নদীর তীরের রাউজান অংশে পশ্চিম গহিরা, গহিরা মোবারকখীল, কাগতিয়ায় তিনটি এবং হাটহাজারীর মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়া, উত্তর মাদার্শায় শাহ মাদারি ও মাদার্শায় মাছোয়া ঘোনা হ্যাচারি। রাউজানের কাগতিয়া ও পশ্চিম গহিরার হ্যাচারিটি অবশ্য ব্যবহারের অনুপযোগী। 

এছাড়া আইডিএফের হালদা প্রকল্পের আওতায় রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী এলাকায় আরও একটি হ্যাচারি নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্প ব্যবস্থাপক সজিব হোসেন বলেন, ‘এই হ্যাচারিতে ডিম ফুটানোর সুবিধা পাবেন ৩০ জন ডিম সংগ্রহকারী। অন্তত দেড়শ কেজি ডিম থেকে রেণু ফোটানো যাবে।’

রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুই উপজেলার ছয়টি হ্যাচারি রয়েছে। তবে রাউজান অংশের তিনটি সরকারি হ্যাচারির মধ্যে দুটিই ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুধুমাত্র মোবারকখীলের হ্যাচারিটি।’ 

তিনি বলেন, ‘হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর সুবিধা পাবেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন ডিম সংগ্রহকারী। ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি ডিম থেকে রেণু ফোটানো যাবে এখানে।’ 

মৎস্য কর্মকর্তা আল মামুন আরও বলেন, ‘রাউজান অংশে অনুপযোগী থাকা হ্যাচারি দুটি নতুনভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে করোনার কারণে প্রকল্পটি পিছিয়ে গেছে। 

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘মা মাছ সাধারণত আমবস্যা-পূর্ণিমায় অথবা অষ্টমী তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে। হালদা নদী থেকে সংগ্রহ নিষিক্ত ডিম হ্যাচারি ও মাটির কুয়ায় দুই পদ্ধতিতে ফোটানো হয়। তবে হ্যাচারির চেয়ে মাটির কুয়ায় উৎপাদিত রেণু উৎকৃষ্টমানের হয়।’ 

এই গবেষক বলেন, ‘গতবার আমরা লক্ষ্য করেছি, মাটির কুয়ার পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেখানে ডিম নষ্ট হয়েছে। আসলে অভিজ্ঞতা আর পরিশ্রম অনুযায়ী মাটির কুয়ায় ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের পরিমাণ কমবেশি হয়। আবার হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে বেশি ডিম ফোটানো যায় না। সেখানে মাটির কুয়ায় আনলিমিটেড ডিম ফোটানো সম্ভব।’ 

গেল বছর ১৪ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ডিম আহরণকারীরা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়