Cvoice24.com

লকডাউনেও রাউজানে কিস্তি আদায়ে চাপ, ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা

মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৮ জুলাই ২০২১
লকডাউনেও রাউজানে কিস্তি আদায়ে চাপ, ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনা

প্রতিকী ছবি।

কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রাউজানে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তির জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এনজিও সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে। কিস্তির টাকা পরিশোধের চাপ সইতে না পেরে পরপর দুজন আত্মহত্যা করেছেন বলে ঋণগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠলেও পিছু হটেনি ঋণদাতা এনজিও সংস্থাগুলো। কেউ ফোনে, কেউ বাড়ি এসে ঋণের টাকার জন্য ধরণা দিচ্ছেন। কখনো কখনো ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে সংস্থাগুলোর মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে।

কেউ বাড়ি বাড়াতে, কেউ ব্যবসা করতে, আবার কেউ গাড়ি কিনতে ঋণ নিয়েছিলেন। তবে লকডাউনে উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় এই ঋণ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামের মানুষজনের জন্য। একদিকে কিস্তির চাপ, অন্যদিকে টানা-পোড়নের সংসারের খরচ। সবমিলিয়ে দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

ঋণগ্রস্ত একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ ৩০ হাজার টাকা, আবার কেউ লাখের উপরে মাসিক  বা সপ্তাহিক পরিশোধের চুক্তিতে ঋণ নিয়েছিলেন। কঠোর লকডাউনেও ফোনে বা বাসায় গিয়ে কিস্তির জন্য হয়রানি করছেন ঋণদাতা এনজিও সংস্থা সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মীরা। কর্মহীন মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ ঋণগ্রস্ত মানুষগুলোর মধ্যে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। 

গত শনিবার রাউজান উপজেলা চিকদাইর ইউনিয়নের মুদির দোকান ব্যবসায়ী অঞ্জন বিশ্বাস কিস্তির টাকার জন্য আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি উঠে তার পরিবার থেকে। এরআগে  গত ১১ জুন (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের নতুনহাট এলাকার ফতেনগর গ্রামে সঞ্জিত বড়ুয়া (৫০) নামে এক দর্জি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওই এলাকার প্রয়াত হীরেন্দ্র লাল বড়ুয়ার ছেলে। 

আত্মহননকারী দর্জি সঞ্জিত বড়ুয়ার ভাতিজা শুভ বলেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংক, প্রত্যাশা ব্যাংকসহ আরও অনেক ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এই টাকা দিয়েই তিনি টেইলার্সের দোকান দেন। প্রথম দিকে ব্যবসায় ভালোই চলছিল। তবে এক বছর ধরে করোনার লকডাউনে ব্যবসায় মন্দা যায়। এ কারণে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। সবার অজান্তে বাড়িতে তিনি বিষ খেয়ে ফেলেন। গত রবিবারও ডাবুয়া ইউনিয়নে  ঋণগ্রস্ত এক যুবক আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু তারা নয়, অহরহ ঋণগ্রস্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। অনেকেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন।

রাউজান উপজেলা সূত্র মতে, রাউজানে ২২টি এনজিও সংস্থা ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে ব্র্যাক, মুক্তিপথ উন্নয়ন কেন্দ্র, সাজেদা ফাউন্ডেশন, আশা, উদ্দীপন, সি.এস.এস, টিএমএসএস, বীজ, ব্যুরো বাংলাদেশ, আইডিএফ, এসএসএস, শক্তি ফাউন্ডেশন, ডিআরআরএ, পদক্ষেপ, প্রত্যাশি, পল্লী মঙ্গল কর্মসূচী, মমতা।

লকডাউনের কিছুদিন আগে ব্র্যাক থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন 
ডাবুয়া ইউনিয়নের হিংগলা এলাকার মো. জুয়েল। তিনি বলেন, প্রত্যেক মাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা করে কিস্তি দিয়ে আসলেও লকডাউনে উপার্জন বন্ধ থাকায় দিতে পারছি না। বাস্তব চিত্র দেখার পরও ব্র্যাকের মাঠকর্মীরা টাকার জন্য বারবার ফোন দিচ্ছে।

কাগতিয়া এলাকার ঋণগ্রস্ত শহীদুল্লাহ নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক বলেন, ‘আমি সিএনজি চালিত অটোরিকশা কেনার জন্য মুক্তিপথ উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছি। সপ্তাহিক ১৩শ টাকায় ৪৪ কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের চুক্তি হয়। কঠোর লকডাউনের কারণে গাড়ি চালাতে পারছি না, উপার্জন বন্ধ থাকায় নিজেরাই ঠিক মতো খেতে পারছিনা। এরমধ্যে কিস্তির টাকার জন্য ফোন করে চাপ দিচ্ছে ম্যানেজার। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মুক্তিপথ উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মসূচী সমন্বয়কারী অসীম বড়ুয়া বলেন, ‘ কঠোর লকডাউনের কারণে আমাদের কিস্তি আদায় বন্ধ রয়েছে। তবে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী এনজিওদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) থেকে গত রবিবার একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে, সেটাতে উল্লেখ করা হয়েছে ২৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট পর্যন্ত (সপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতিত) সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট আর্থিক সেবা পরিচালনা করা যাবে। এই নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করছি। রাউজানে তাদের এনজিও’র আওতায় ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।’ 

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, ‘লকডাউন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ থাকবে। অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত কিস্তির জন্য চাপ প্রয়োগের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। ’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়