Cvoice24.com

রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়/
‘স্যার নেই, দরজা ধাক্কা দিবেন না’

রাউজান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:১২, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
‘স্যার নেই, দরজা ধাক্কা দিবেন না’

দরজায় সাঁটানো ‘স্যার অফিসে নেই। দয়া করে দরজা ধাক্কা দিবেন না’। কোন বেসরকারি অফিসে নয়, এমন বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়েছে সরকারি দপ্তরে! গত দুদিন ধরে এই বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কক্ষের সামনে। অথচ বাইরে সেবাপ্রার্থীদের ভিড়।

জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, সংশোধন করতে এসে প্রতিদিন ফিরে যেতে হচ্ছে শত উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে আসা শত শত সেবাপ্রার্থীকে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন বহু বিদেশগামীসহ সাধারণ মানুষ। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম এ কাদের কবে ফিরবেন তাও জানতে পেরে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের।

জানা গেছে, শ্বশুর মারা যাওয়ার অজুহাতে গত সোমবার থেকে অফিস করছেন না রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম এ কাদের। চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জানা যাচ্ছে না কবে তিনি অফিসে ফিরবেন। ফোনও রিসিভ করছেন। অফিসে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জানাতে পারছেন না কবে তিনি অফিস করবেন।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় সেবাপ্রার্থী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের একজন রাউজানের শেষপ্রান্ত বাগোয়ান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবাসী মো. মিন্টু। 

তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাই থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এন আই ডি) কার্ড করতে পারিনি। ভোটার নিবন্ধন ফরম জমা দিতে এসে ‘স্যার অফিসে নেই। দয়া করে দরজা ধাক্কা দিবেন না’ লেখাটি দেখে অফিসে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা না আসা পর্যন্ত জমা দেয়া সম্ভব নয়। 

ইমরান নামে সুলতানপুর জান আলী মুন্সির বাড়ির এক যুবক এনআইডি সংশোধনের জন্য এসে ফিরে যান। তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং চলছে। তবে নাম সংশোধন আটকে থাকায় পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছি না।

পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রাশেদ বলেন, আমার নিকটতম প্রবাসী আত্মীয়ের নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে সকল কাগজপত্র দেওয়ার পরও হয়রানি করছে। এখন পর্যন্ত দুবার এসেও কাজ হয়নি। আবারও রবিবার আসতে বলছে।  

মো. আরফাত নামে এক তরুন একটি অক্ষর ‘এ’ সংশোধনের জন্য উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়ন থেকে এই পর্যন্ত তিনবার এসে ফিরে যেতে হয়েছে। এক ধরনের হয়রানি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

শুধু তারা নয়, সেবা না পেয়ে প্রতিদিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার শত শত মানুষ। কোনদিন থেকে এই কর্মকর্তাকে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। 

এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রির দায়িত্বে থাকা রকি বলেন, স্যারের শ্বশুর মারা গেছেন।  তিনি ছুটিতে আছেন। গত সোমবার থেকে তিনি অফিসে আসছেন না।  কখন আসবেন তার নির্ধারিত তারিখ জানাতে না পারলেও আগামী সপ্তাহে যোগদান করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। 

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (চলিত দায়িত্ব)  রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন, উনার শশুর মারা গেছেন বলে শুনেছি। হয়তো তিনি ছুটিতে আছেন।  

উল্লেখ্য, তিনি গত ১৮ ডিসেম্বর রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সন্দ্বীপ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাউজানে যোগদানের পর থেকে নানা অজুহাতে পদে পদে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ নির্বাচন অফিসে আসা সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়