Cvoice24.com

হালদার মিঠা পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা

মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ৩০ এপ্রিল ২০২৩
হালদার মিঠা পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা

তাপমাত্রা বেশি, বৃষ্টির দেখা নেই। জোয়ারে সাগরের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে নদীতে। মিঠাপানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নোনাপানি। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর জীব-বৈচিত্র্য। ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। 

তাদের দাবি একদিকে অতিতাপমাত্রা, অন্যদিকে লবণাক্ততায় ভালো নেই মা-মাছ। এর কারণ হিসেবে দেখছেন, গড়পড়তা উত্তর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়া। এরই মধ্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পরিশোধনের জন্য নদীর যেস্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে, সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতেও লবণাক্ততার হার বেশি। তাছাড়া কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণও কমে গেছে। 

গবেষকদের মতে, প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল-জুন) অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ মুশলধারে বৃষ্টি হলে এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্রোতে পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গেল ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। 

নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের শত শত ডিম সংগ্রহকারী ডিম ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। অনেকে ডিম সংগ্রহের ব্যবহৃত নৌকা মেরামত করেছেন। আবার কেউ কেউ নতুন নৌকা কিংবা বাঁশের ভেলা তৈরি করেছেন। প্রস্তুত রেখেছেন ডিম সংগ্রহের জাল, নোঙর, বালতি, থালাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগরের মতে হালদার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোডের জিও ব্যাগ দ্বারা নদীর কুম (নদীর গভীরতা) ভরাট হয়ে যাওয়া। তা ছাড়া ভূজপুর রাবার ড্যাম, নদীর বিভিন্ন শাখা খালে স্লুইস গেইটে পানি আটকে রাখায় নদীর পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রত্যেক বছর নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। 

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রা ও পানির গুনগত মানের নিবিড় সম্পর্ক। মাছের অত্যানুকুল তাপমাত্রা হচ্ছে (২২-৩০) ডিগ্রী সেলসিয়াস তবে এরা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। বর্তমানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অপরদিকে পানির লবণাক্ততা (০.১৪২-১.০১৬ পিপিটি, আদর্শ মান: ০.৫ পিপিটি), টিডিএস (১৯০-১৫০৭ পিপিএম, আদর্শ মান-১০০০ পিপিএম), এবং ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি (৩৭৯-৩০১৩ মাইক্রোসিমেন্স/সেন্টিমিটার, আদর্শ মান-৩৫০ মাইক্রোসিমেন্স/সেন্টিমিটার) আদর্শ মান অতিক্রম করেছে। নদীর মদুনাঘাট থেকে সর্তারঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নেওয়া পানি ল্যাবে পরীক্ষা করে পাওয়া রিপোর্টে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেশি। যা বৃষ্টি হলেই কমতে পারে। তিনি আরও জানান, পরিবেশ অনুকুলে থাকলে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের ২ থেকে ৭ তারিখের পূর্ণিমার জো’তে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী অমাবস্যার জো শুরু হবে ১৬ মে আর শেষ হবে ২১ মে।  তাছাড়া জুন মাসে আরও দুটি জো’ আছে।’ 
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়